গণবাণী ডট কম :
আপিল বিভাগের ফাঁসির রায় পুনঃবির্বেচনা চেয়ে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পরই রবিবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিভিউ আবেদন দায়ের করা হয়। রিভিউ পিটিশনে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে ১৪টি আইনগত যুক্তিতে।
এ প্রসঙ্গে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো. মনির বলেন, আপিল বিভাগের নকল শাখা থেকে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পরই রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
রংপুর অঞ্চলে হত্যা, গণহত্যাসহ একাধিক মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এটিএম আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ তার আপিল খারিজ করে দিয়ে ফাঁসির রায় বহাল রাখে। সবোর্চ্চ আদালতের ওই রায় পুনঃবির্বেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করলেন এই জামায়াত নেতা।
১৪ আইনগত যুক্তিতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন। পিটিশনে বলা হয়েছে, স্বীকৃত মতে এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৯৭১ সালে ১৮ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিকের একজন ছাত্র ছিলেন। অথচ সব হত্যাকাণ্ডের দায় তার উপর চাপানো হয়েছে। আপিল বিভাগ তৎকালীন তার এই সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় না নিয়েই তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।
আসামির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির পিটিশনে উল্লিখিত আইনগত যুক্তির এই বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। রিভিউ পিটিশনে আরো যেসব যুক্তি নেয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুক্তিসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হল:
১. চার্জ গঠন আদেশ অনুযায়ী দুই নম্বর চার্জের ঘটনাস্থল মোকসেদপুর গ্রাম। অথচ রাষ্ট্রপক্ষের ৩ নম্বর সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনাস্থল হল উত্তর রামনাথপুর। আপিল বিভাগ ঘটনাস্থল সংক্রান্ত পরস্পর বিরোধী এই বক্তব্যের সন্তোষজনক সমাধান না করেই আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
২. রাষ্ট্রপক্ষের ৩ নম্বর ও ৬ নম্বর সাক্ষীর দাবি অনুযায়ী তারা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। অথচ তাদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই সময় তিন নম্বর সাক্ষী ৫/৬ কিলোমিটার ও ৬ নম্বর সাক্ষী ৩/৩.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলেন। আপিল বিভাগ সাক্ষীদের বক্তব্যের এই বৈপরীত্য বিবেচনায় না নিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
৩. রাষ্ট্রপক্ষের ৪ নম্বর সাক্ষী জেরায় স্বীকার করেছেন যে, ঝাড়ুয়ার বিলের ঘটনায় ইসলাম জড়িত নন। আপিল বিভাগ মতামত প্রদান করেছেন যে, ট্রাইব্যুনাল ভুলবশতঃ ‘ইহা সত্য নহে’ শব্দসমূহ উল্লেখ করতে পারেনি এবং আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। মামলার নথিপত্রে উল্লিখিত সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী উনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
৪. রাষ্ট্রপক্ষের দাখিলকৃত প্রদর্শনী নম্বর ২৫ অনুযায়ী আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের মতো কার্যক্রমে জড়িত থাকার কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের এই দালিলিক প্রমাণ বিবেচনায় না নিয়েই আজহারকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।
৫. আপিল বিভাগ রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, আজহারুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের ৯ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দিতে আপত্তি জানাননি। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দিতে সুনির্দিষ্টভাবে আপত্তি জানানো হয়েছে।
৬. রাষ্ট্রপক্ষের ১০ নম্বর সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বলেছেন যে, তিনি ইসলামকে ১৯৭১ সালে চিনতেন কারণ ইসলাম তখন কারমাইকেল কলেজের ছাত্রনেতা ছিলেন। অথচ তিনি কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের নাম জানেন না। এমনকি কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষের নামও জানেন না। রায়ে আপিল বিভাগ সাক্ষ্যের এই অংশ বিবেচনায় না নিয়েই আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।
প্রসঙ্গত রায়ের অনুলিপি পেয়েই আজ রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন আজহারের আইনজীবীরা।