গণবাণী ডট কম:
যথাযথ মর্যাদা ও বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় শোক দিবস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হয়েছ।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় শোক দিবস পালন
যথাযথ মর্যাদায় নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে জাতীয় শোক দিবস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কনস্যুলেটসহ বিভিন্ন সংগঠন। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এর আগে সকালে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের সহযোগিতায় নিউইয়র্ক সিটির এলমহার্স্ট হাসপাতালে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মাহবুবুর রহমান, সামসুদ্দিন আজাদ, ডা. মাসুদুল হাসান, জয়নাল আবেদিন, মহিউদ্দীন দেওয়ান, আব্দুল হাছিব মামুন, হাজী এনাম, সাখাওয়াত বিশ্বাস, মুজাহিদ ইসলাম, আবুল মনসুর খান, কাজী কয়েস, সামসুল আবেদিন, শাহীন আজমল, ইমদাদ চৌধুরী, আলী হোসেন গজনবী, শাহানারা রহমান, নুরুল আমিন বাবু, ওয়ালি হোসেন, সাইকুল ইসলাম, দুরুদ মিয়া রনেল, জেড এ জয়, জাহাঙ্গীর এইচ মিয়া, জাহিদ হাসান, আলামিন আকন্দ, হুমায়ূন চৌধুরী, নান্টু মিয়া প্রমুখ।
জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবস পালন
গভীর শোক, শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্যদিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
জেনেভাস্থ জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শামীম আহসান ১৫ই আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে দিনব্যাপি কর্মসূচির সূচনা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সন্ধ্যায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শুরুতেই প্রথম সচিব বাকি বিল্লার উপস্থাপনায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন কমার্সিয়াল কাউন্সেলর দেবব্রত চক্রবর্তী, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কাউন্সেলর এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব আলমগীর কবির এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব আব্দুল ওয়াদুদ আকন্দ। এ সময় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ ও চিন্তাধারা এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ পরিক্রমায় সংঘটিত বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ নেতৃত্বের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং সাধারন মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।
সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পক্ষের সকলকে জননেত্রীর পাশে থেকে তার হাতকে আরো শক্তিশালী করার আহ্ববান জানান তিনি।
আরো বক্তব্য রাখেন সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গোলাম মোর্শেদ সাচ্চু, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাসুম খান দুলাল, শাহ্ আলম এগার, কবিতা আবৃত্তি করেন উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মোহাম্মদ মহসিন, সহ সম্পাদক সৈয়দ গোলাম কামরুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আকবর আলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক গৌরিচরন সসীম সহ আরো অনেকে।
জাতির পিতার জীবন ও কর্ম নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই, তথ্যচিত্র ও শিল্পকর্মের সমন্বয়ে “ বঙ্গবন্ধু কর্নার “ উদ্ভোধন করেন রাষ্ট্রদূত ।
পরিশেষে আবু বকর মোল্লার পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সুইডেনে শোক দিবস পালন
বিনম্র শ্রদ্ধা, শোক ও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস-২০১৯ পালন করেছে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। বৃহস্পতিবার সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণ ও বাংলাদেশ হাউজে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে শোক দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।
বিকেলে দূতাবাস প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ ও কর্মের উপর আলোচনা সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ও বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের উপর এক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বিকেলের আয়োজন শুরু হয়। সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ নাজমুল ইসলামের উপস্থিতিতে উক্ত আয়োজনে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও সুইডেনে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল আলোচনা সভা। দূতাবাসের প্রথম সচিব সায়মা রাজ্জাকীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত ও অন্যান্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয় এবং সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। অত:পর বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব, তিন পুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, কৃষকনেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, কর্নেল জামিল, বেবী সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আরিফ, আব্দুল নঈম খান রিন্টুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে আগত অতিথিবৃন্দ সারিবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
আলোচনা পর্বে আগত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই বক্তব্য রাখেন। বক্তাগণ তাঁদের আলোচনায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং অসামান্য আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তারা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছিল। বক্তারা ১৫ আগস্ট এর শোককে শক্তিতে পরিণত করে নিজ নিজ জায়গা থেকে অধিকতর দেশপ্রেমে আত্মনিয়োগ করবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত মোঃ নাজমুল ইসলাম তার বক্তব্যে জাতির পিতার স্বপ্ন ও আদর্শকে সামনে রেখে একটি অসাম্পদ্রায়িক, প্রগতিশীল এবং গণতান্ত্রিক স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন সাফল্যজনক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে ঘাতকরা মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ এবং আদর্শকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, কিন্ত ঘাতকদের সেই হীন উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাই নন, স্বাধীনতা-উত্তর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃতি আদায়ে তার প্রাজ্ঞ কূটনীতি তাকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতার মর্যাদায় আসীন করেছে। রাষ্ট্রদূত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলার গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, দেশের বাইরে বসবাসরত নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরো জানতে হবে এবং তার সংগ্রামী জীবনের আর্দশকে ধারণ করে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানের পর এক বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। উক্ত দোয়া মাহফিলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দূতাবাসের আয়োজনে উপস্থিত অতিথিদের আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।