গণবাণী ডট কম:
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃক আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন ব্যানকোভিড’-এর সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পন্ন, এখন এটা ফেজ-১ ও ফেজ-২ ট্রায়ালের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও অনুমোদন পেলে এ বছর ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে জনগণের জন্য এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ, পরিচালক আহমেদ হোসেন, শহিদ উদ্দিন আলমগীর, আবদুল্লাহ আল রশিদ, সামির আল রশিদ, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ, সিএসও ড. নাজনীন সুলতানাসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশিদ কিরণ। তিনি বলেন, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড-এর এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘটনা আসলে সমগ্র বাংলাদেশের সাফল্য। আমাদের জন্য এটা একটা গর্ব করার মত ঘটনা। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও যে বড় কিছু আবিষ্কার করে দেখাতে পারে সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি। এখন চিকিৎসা বান্ধব বর্তমান সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিয়ে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাই।
পরে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃক আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন ব্যানকোভিড’ এর অগ্রগতি নিয়ে একটি ডকুমেন্টরি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ বলেন, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃক আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন ব্যানকোভিড’-এর এনিম্যাল মডেলে নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। ট্রায়ালের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও ভ্যাকসিনপ্রকল্পের ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা আমরা বিস্তারিত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উপস্থাপন করেছি। সরকারের অনুমোদন পেলে এখন ফেজ-১ ও ফেজ-২ ট্রায়াল সম্পন্ন করে আমরা এ বছর ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে জনগণের জন্য এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারবো।
তিনি বলেন, বিশ্বে গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত এই ভ্যাকসিন ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েনটস এমআরএনএ ভিত্তিক প্রথম ভ্যাকসিন (ব্যানকোভিড), যা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম বলে স্বীকৃতি দি য়েছে মার্কিন মেডিক্যাল জার্নাল বায়োআর্কাইভ। বিশ্বের অন্যান্য স্বীকৃত অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরাও আমাদের ভ্যাকসিনে কোনোরেকম ত্রুটি খুঁজে পাননি। তাই আমি বলবো, দেশে প্রথমবারের মতো সার্বিকভাবে সক্ষম কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) রোগের টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কার করেছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। সরকারের অনুমোদন পেলে আমরা এখন দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে ৫০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো।
তিনি আরো জানান, দেশের নাগরিকদের জন্য সুলভে দূরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে কাজ শুরু করে। ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে আমরা যাত্রা শুরু করি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড’ গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ৫ বছর ধরে আমরা এই গবেষণার জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি কোনো মুনাফা ছাড়াই। শুধু দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে আমরা এটা করেছি। কেননা, বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন, সেই দেশের জন্য আমাদেরও তো কিছু দেয়ার আছে। তাই তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁকে উৎসর্গ করে আমরা আমাদের কঠোর শ্রমসাধ্য এই করোনা ভ্যাকসিনটি উপহার দিতে চাই। যাতে দেশের মানুষ উপকৃত হয়। দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই অধিকার আছে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার এবং এই করোনা ভ্যাকসিন পাওয়ার, কিন্তু আমদানি করা ভিনদেশী ভ্যাকসিন দিয়ে কয়জনের চাহিদা পূরণ করা যাবে? তাছাড়া, বিদেশী ভ্যাকসিনের তাপমাত্রাসহ আরো অনেক টেকনিক্যাল জটিলতাও আছে, যা আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিনে থাকবে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত উপস্থিত থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ও ফার্মাসি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. এসএম আবদুর রহমান, বিশিষ্ট লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, ডা. মজিবুর রহমান, ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন। স্বনির্ভর বাংলাদেশ- এর চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার আলমসহ আরোপ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।