গণবাণী ডট কম:
আজ ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:)। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারি, মানবজাতির কল্যাণের বার্তাবহক, মহান আল্লাহর প্রিয় নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর জন্ম ও ওফাত দিবস।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে আইয়ামে জাহিলিয়াতের ঘনঘোর তমসা ছাওয়া ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সুবহে সাদিকের সময় ইসলামের শেষ নবী (সা:) আরবের মরু প্রান্তরে মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে মাত্র ৬৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
১২ রবিউল আউয়াল দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী বা সিরাতুন্নবী (সা:) হিসেবে পালন করেন সারা বিশ্বের মুসলমানরা। আজ সমগ্র পৃথিবীর মুসলমানদের ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসে একাকার হওয়া প্রাণ-মন-মনন আকুল করা দিন। উৎসবের রোশনাই ঘেরা একটি দিন।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)এর পূর্ণ নাম: আবু আল-কাশিম মুহাম্মাদ ইবনে ʿআবদুল্লাহ ইবনে ʿআবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম। তিনি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, তথা “বার্তাবাহক”, যার উপর ইসলাম তথা সারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ ও আসমানী কিতাব, যাকে মহান আল্লাহ পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসাবে ঘোষণা করেছেন, সেই “আল-কুরআন” অবতীর্ণ হয়েছে।
জন্মের আগেই পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড়ো হয়ে ওঠেন। ৪০ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নবুয়্যত লাভ করেন। কিন্তু অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তার দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসুল (সা:)এর ওপর নিপীড়ন শুরু করে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তার সাথি হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি একপর্যায়ে তারা রাসুল সাল্ল¬াল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬ামকে হত্যার নীল নকশা প্রণয়ন করে। আল্লাহর নির্দেশে তিনি জন্মভূমি ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় তিনি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্ল¬¬াহর আইন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মদিনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদিনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে খ্যাত। ২৩ বছর অক্লান্ত শ্রম, অসীম সাধনায় অবশেষে রাসুলে পাক সাল্লাল্ল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য দিন তথা জীবনব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’ (সুরা মায়িদাহ, আয়াত ৩)।
হযরত মোহাম্মদ (সা:) ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পণ্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার বহুল আলোচিত ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে হযরত মোহাম্মদ (স.)-কে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে স্থান দিয়েছেন। ব্রিটিশ লেখক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, ‘এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তার আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে।’
বিশ্বনবির জন্মদিন ও ওফাত দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়ালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করে মুসলিম বিশ্ব। এ উপলক্ষ্যে তারা সীরাতুন্নবির (স.) আলোচনা, দরুদ পাঠ, দান-সদকা করে থাকেন। মিষ্টি, খাবার প্রভৃতি তৈরি করে বিতরণ করেন। ভক্তিভরে দরুদ পাঠে মশগুল থাকেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (স.) উপলক্ষ্যে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার পৃথক বাণীতে তাঁরা দেশবাসীসহ বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করেছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সংবাদপত্রসমূহেও ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।
বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার, মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন শোভাযাত্রা বের করবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলাদ, আলোচনা, দোয়া মাহফিলসহ পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিনটি উপলক্ষে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ অঙ্কিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দ্বীপ ও লাইট পোস্টে টাঙানো হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা করা হবে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভির্যের মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাত থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে মসজিদে-মসজিদে এবং নিজ-নিজ বাসায় কোরআন খতম ও জিকির আজগারের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিন ও তাঁর প্রিয় হাবিব মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিশেষ রহমত কামনা করেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়াও দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলাসহ সরকারী-বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনীর ওপর পক্ষকালব্যাপী আলোচনা সভা ও মাহফিলসহ বিশেষ কর্মসূচি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাত থেকেই পালন করা শুরু হয়েছে।
এ উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ভবন আজ সন্ধ্যা থেকেই আলোক-সজ্জায় সজ্জিত করা হয় ।
এদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালা।