গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের একটি আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় এক অজ্ঞাত পরিচয় নারীকে স্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ঘটনার ৫ বছর পর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও জড়িত ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারের পর আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গ্রেফতার আসামীরা হলো,ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার পালোহাটি গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মোঃ জিয়াউর রহমান @ সুমন (৪৫),অপর আসামী মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি থানার রাউৎভোগ গ্রোমের আয়নাল ফকিরের ছেলে মোঃ আমির হোসেন ফকির (৩৩),অপর আসামী মোঃ কামরুল হাসান সবুজ (৩৮)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার আমিরাবাড়ি এলাকার মৃত ইয়াসিন আলীর ছেলে।
তাদের মধ্যে সুমনকে ২৬ জুলাই রাতে দেড়টার দিকে ময়মনসিংহ কোতায়ালী থানাধীন মাসকান্দা এলাকা থেকে, আমির হোসেনকে একই রাত ২টারি দিকে তার নিজ বাড়ী হতে এবং কামরুল হাসানকে একই রাত ৩টার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানাধীন মালখানাগর চৌরাস্তা তার ভাড়া বাড়ী হতে গ্রেফতার করে।
পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বুধবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, প্রায় ৫ বছর আগে গত ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন হোতাপাড়া ফাঁড়ীর পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় বৈশাখী আবাসিক হোটেলের নিচ তলায় জেনারেটর রুমে ড্রামের ভিতর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় নারীর (বয়স অনুঃ ২৫ বছর) মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ীর এস আই মোঃ রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা রুজু করেন। থানা পুলিশ মামলাটি প্রায় ৩ বছর তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে মামলাটি তদন্ত শেষে চুড়ান্ত রিপোর্ট “সত্য” বিজ্ঞ আদালতে দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত স্বপ্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন। পিবিআই এর উপ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জামাল উদ্দিন মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত মামলার রহস্য উদঘাটন এবং আসামীদের গ্রেফতার করেন।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গাজীপুর মহানগরীর হোতাপাড়াস্থ বৈশাখী আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন মেয়েদেরকে এনে অনৈতিক কাজে ব্যবহার করত। নিহত নারী কাজের সন্ধানে গেলে গ্রেফতারকৃত আসামী এবং তাদের সহযোগী আসামীগণ ঘটনার দিন উক্ত নারীকে হোটেলের ২০৪ নং কক্ষে আটকে রেখে মেয়েটির সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব করলে মেয়েটি প্রত্যাখান করে। পরে আসামীগণ মেয়েটির সাথে জোর পূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক করার জন্য চেষ্টা করলে মেয়েটি বাধা প্রদান করে। এরপর আসামীগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উক্ত নারীকে কক্ষের খাটের উপরে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে উক্ত আবাসিক হোটেলের মালিক মোঃ ইকবাল হোসেনের নির্দেশে মরদেহ একটি ড্রামের ভিতর ভরে হোটেলের পিছনে খালি জায়গায় মাটির নিচে পুঁতে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু পরে লাশটি ড্রামে ভরে হোটেলের পিছনে পুঁতে রাখার জন্য নিয়ে গেলে লোকজন থাকায় উক্ত স্থানে লাশটি পুঁতে রাখতে না পারায় লাশটি নিয়ে পূনরায় হোটেলের স্টোর রুমের মধ্যে রেখে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, এটি একটি হত্যাকান্ড। মূলত বৈশাখী আবাসিক হোটেলে ভিকটিমের সাথে জোর পূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক করতে গিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডার জের ধরে মেয়েটিকে শ্বাসসরোধ করে হত্যা করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীগণ অজ্ঞাতনামা নারী হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামীগনকে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে অজ্ঞাতনামা নারী হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আসামীদের কার কি ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করেছে।
তিনি আরো জানান, অপর আসামীদের গ্রেফতার চেষ্টা চলছে।