গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বন্ধুর প্রেমিকাকে গালি দেয়ায় বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় কলেজ ছাত্র ইমন রহমানকে। পরে লাশ ফেলে দেয়া হয় তুরাগ নদে। ঘটনার ১১ দিন পর ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন আমিনবাজার এলাকায় তুরাগ নদ থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং মূল পরিকল্পনাকারী নিহত ইমনের দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
নিহত ইমন রহমান (২১) গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার রসুলপুরের আজিবর রহমানের ছেলে।
গ্রেফতার আসামীরা হলো,গাজীপুরের মো: সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে রাশেদুল ইসলাম @ রাসু (২২) এবং অপরন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন কালামপুর এলাকার রতন চন্দ্র বর্মনের ছেলে বিপুল চন্দ্র বর্মন (১৯)।
র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার)নোমান আহমদ বুধবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, গত ০৭ জুলাই রাত ১১টার দিকে ইমন তার মায়ের কাছ থেকে ২শ টাকা নিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা হতে বের হয়ে যায়। প্রথমে ঘটনাটি স্বাভাবিক মনে হলেও ইমনের বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ার কারণে পরিবারের মনে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। পরবর্তী ৫ দিন ইমন বাড়ী না আসায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে ইমনের কোন সন্ধান পায়নি। গত ১১ জুলাই পরিবারের পক্ষ থেকে কালিয়াকৈর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করা হয়। এরপর গত ১৬ জুলাই বিকালে ঢাকার সাভারস্থ আমিন বাজার কেবলার চর এলাকার তুরাগ নদে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা নৌ-পুলিশকে খবর দেয়। উদ্ধারকৃত লাশটি কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ভিকটিম ইমন রহমানের বলে সনাক্ত করে। কিন্তু উদ্ধারকৃত মরদেহ সম্পূর্ণ পচে যাওয়ায় এটি হত্যাকান্ড কিংবা দুর্ঘটনা কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে অনুমান করা সম্ভব ছিল না। তবে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করেন।
তিনি আরো জানান, এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে র্যাব-১, গাজীপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল, র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানাধীন আবাদপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় আত্মগোপনে থাকা হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী রাশেদুল ইসলাম @ রাসুকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপর ৪ সহযোগীর মধ্যে অন্যতম সহযোগী বিপুল চন্দ্র বর্মনকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন কালামপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ধৃত আসামীদের তথ্য মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ১টি দা ও ১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীদ্বয় ভিকটিম ইমনকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং এই চাঞ্চল্যকর হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
তিনি আরো জানান, আসামীরা জানায় ইমন আসামীরা তারা সকলে একই স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনা করত এবং বিগত ৫/৭ বছর যাবত তারা পরস্পরের সাথে পরিচিত। তারা বন্ধু হলেও ইমনের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পূর্ব হতেই বিরোধ ছিল। সম্প্রতি প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ইমনের সাথে রাশেদুল ইসলাম রাসুর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তিব্রতা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে রাশেদুল ইসলাম রাসু তার অপর ৪ জন সহযোগীসহ ভিকটিম ইমনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশেদুল ইসলাম রাসু মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গত ৭ জুলাই রাত ১১টায় ইমনকে তার বাড়ীর পশ্চিম পাশে বটগাছতলায় আসতে বলে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে রাসু, বিপুলসহ অন্যান্য হত্যাকারীরা আগে থেকেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। এরপর রাত সাড়ে ১১টার সময় ভিকটিম ইমন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন রসুলপুর বটগাছতলায় পৌঁছামাত্রই আসামী রাশেদুল ইসলাম @ রাসু ইমনকে তার প্রেমিকাকে গালিগালাজ করার কারণ জিজ্ঞাসা করে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আসামী রাশেদুল ইসলাম @ রাসু দা দিয়ে ভিকটিম ইমনকে কোপ দেয় এবং অন্যান্য আসামীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ইমনকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে ভিকটিম ইমন নিস্তেজ হয়ে গেলে হত্যাকারীরা ইমনের লাশ যাতে কেউ খুঁজে না পায় সে উদ্দেশ্যে তুরাগ নদে ভাসিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তুরাগ নদে স্রোতের কারণে লাশ সাভারের আমিন বাজারে গিয়ে ভেসে উঠে।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।