গণবাণী ডট কম:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাবে না। একটি স্মার্ট উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হয়ে ওঠার জন্য এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গাজীপুরের সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির ‘৪৩তম জাতীয় সমাবেশ-২০২৩’-এ প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন,আমরা বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের যে পদক্ষেপ নিয়েছি, এতে এই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
তিনি বলেন,সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশ আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো। স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি, আমরা স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপন করেছি, আমাদের দেশে মেট্রো রেল চালু হয়েছে, পাতাল রেলও চালু হবে, কর্ণফূলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল করে দিচ্ছি, পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে আমরা করেছি। আর এই প্রতিটি স্থাপনার নিরাপত্তার সঙ্গে আনসার বাহিনী বিশেষভাবে জড়িত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশটা আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করেছি এবং আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আমরা আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক এবং বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত কমানড্যান্ট মো. ফখরুল আলম তাঁকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে আসনার ও ভিডিপি সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং একটি খোলা জীপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে আনসার বাহিনীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল (মুজিব নগর সরকার)। সেখানে আনসার বাহিনী প্রথম গার্ড অব অনার প্রদর্শন করেন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আন্দোলনে ও বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর বিরাট ভুমিকা রয়েছে। আনসার বাহিনী তাদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এবং অনেক সদস্যই জীবন উৎসর্গ করেছিল। গ্রাম পর্যন্ত যেসব আনসার বাহিনী কর্মরত ছিল জাতির পিতার আহ্বানে তারা যা ছিল তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে। তারা স্থানীয় জনগণ ও মুক্তিকামী মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যেতে সহায়তা করে।
আনসার বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ। সরকার গঠন করার পর আনসার বাহিনীর জন্য নতুন আইন প্রনয়ণ করা, তাদের পোষাক, ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা, কল্যাণ ট্রাস্ট করে সিড মানি দেয়া, ব্যাটালিয়ান আনসার স্থায়ী করণসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়েছিলাম। ১৯৯৮ সালে আনসার বাহিনীকে প্রথম পতাকা প্রদান করি। আমাদের হাতেই প্রথম পতাকা পেয়েছে। এ বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তাদের গ্রেড উন্নতি করা, পদ উন্নয়নের ব্যবস্থা করা বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া একটি বিশেষায়িত গার্ড ব্যাটালিয়ানসহ নতুন আনসার ব্যাটালিয়ান গঠন, আনসার ব্যাটালিয়ানের তিনটি বেতন গ্রেড উন্নতি করা, অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে ১৫টি ব্যাটালিয়ান আধুনিক অবকাঠামো মডেল ব্যাটালিয়ানে রূপ দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য ব্যাটালিয়ানে আমরা পদক্ষেপ নিবো। আমাদের কোম্পানী কমান্ডার ইউনিয়ন কমান্ডার ও প্লাটুন কমান্ডারদের মাসিক সম্মানী ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। সাধারণ আনসারদের চাল, গম, ডাল, সয়াবিন তেলের সাথে চিনি ও মুগ ডাল সংযোজন করা হয়েছে। ভিডিপি সদস্যদের জন্য আধুনিক ডিজাইনের নতুন শাড়ি এবং হিল আনসার তাদের স্থায়ী করণের কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২২ সালে বাহিনীর সদস্যদের জন্য পাঁচটি এসকেএম ব্যারাক ও প্রশিক্ষানার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির ৬টি সেমি পাঁকা ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন ২৭টি উপজেলা অফিস নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ৯টির কাজ ইতিমধ্যে শেষ করা হয়েছে। আমরা চাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেন আনসার বাহিনী চলতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন কাজ করছি। আনসার ও ভিডিপি একাডেমীতে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ভিআইপি অফিসার্স মেস, সিনিয়র অফিসার্স মেস উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া আমরা আনসার বাহিনীর খাদ্য ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ভৌত অবকাঠামো এক দিকে যেমন গড়ে তুলেছি তাছাড়াও কিচেন, ড্রাইনিং রুম তৈরি করে দিয়েছি।
নিরাপত্তা আনসার ভিডিপি বাহিনীর অবদান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদের বাহিনী নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, বিশেষ করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রতিটি বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে আনসার ভিডিপি বাহিনী। বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি একাডেমীতে শফিপুর গাজীপুরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফাকে অবলম্বন করে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনারের ভাস্কর্য একাডেমীর মূল ফটকের দু’পাশে মূরাল নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাহিনীর কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণ দৃষ্টি নন্দন আধুনিক যুগপযোগী চারটি অফিসার্স মেস নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতি ব্যাটালিয়ান সদর দপ্তরে পারিবারিক আবাসনও নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা ব্যাটালিয়ান পর্যায়ে অস্ত্রাগারও নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু করোনা মহামারি অর্থনৈতিক বিরাট চাপ সৃষ্টি করেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, তাছাড়া ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশ ছাড়াও সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে এখান থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সেজন্যই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আহ্বান করছি, যাতে এক ইঞ্চি জমি যাতে অনাবাদী না থাকে। যত অনাবাদী জমি আছে সব আবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আনসার বাহিনী গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। গ্রামের লোকদের শেখানো, তাদের দ্বারা কাজ করানো, ফসল সংরক্ষণ করানোর দায়িত্ব পালন করতে পারে আনসার বাহিনী। আমি চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। আজকে যারা পুরষ্কার পেয়েছেন মেডেল পেয়েছেন তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাই। আমি চাই এভাবেই আপনাদের কাজের স্বীকৃতি কাজে উৎসাহ তৈরি হয় সেই কাজটিই করতে চাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক এবং বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট মো. ফখরুল আলম। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্য আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তা, একনিষ্ঠতা, সততা, দূরদর্শিতা, মমত্ববোধ প্রভৃতির দৃষ্টান্তপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনুষ্ঠানে ৮টি ক্যাটাগরিতে ১৮০ জনকে সাহসিকতা ও সেবা পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আনসার ভিডিপি একাডেমির সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, অনুষ্ঠান শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবিকে ভিত্তি ধরে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ‘স্বাধীনতার পথে’, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ১২ জন আনসার সদস্যের ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের ভাস্কর্য এবং একাডেমির মূল ফটকের দুই পাশে নির্মিত ম্যুরাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।