গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানাধীন হারবাইদ পূর্বপাড়া এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করার সময় দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় হত্যা করা হয়েছিল রাজধানীর তেজগাঁও এ অবস্থিত ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের ১ম বর্ষের এক ছাত্রকে। এ ঘটনার পাঁচ বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করে হত্যায় জড়িত দুই জনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেফতারের পর আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। এতে তারা হত্যার কারণ ও জড়িতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে।
নিহত ছাত্রের নাম ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ উরফে ইফতি (২০)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানাধীন হারবাইদ পূর্বপাড়া এলাকার মৃত শামসুদ্দিন আহমেদের ছেলে।
গ্রেফতার আসামীরা হলো, জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার উত্তরআদিপুত গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে এবং ঢাকার খিলক্ষেত পূর্ব নামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃদুল হাসান (৩০) ও গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীণ শিলমুন মন্ডলবাড়ী এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে ফরিদ আহম্মেদ (৩২)। মৃদুল হাসানকে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে এবং ফরিদ আহম্মেদকে টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে গত রোববার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়।
আসামীরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, আসামীরা ঘটনার কিছুদিন পূর্বে গ্রেফতারকৃতদের সহযোগিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে এসে ভিকটিমের মামা মিজানুর রহমানের নিকট চাঁদা দাবী করে। ভিকটিমের মামা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে ঘটনার দিন রাতে গ্রেফতারকৃতরা মাদক সেবন করে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করে মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর জেলা পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানাধীন হারবাইদ পূর্বপাড়া এলাকায় ইফতির মামা মোঃ মিজানুর রহমান (৬০) একটি বাড়ী নির্মাণ করছিলেন। ইফতি ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করতো তাই তাকে বাড়ী নির্মাণের কাজ দেখাশুনা করতে দায়িত্ব দেয়া হয়। বাড়ী নির্মাণের জন্য স্থানীয় একটি গ্রুপ ইফতির মামার নিকট চাঁদা দাবী করে। কিন্তু ইফতির মামা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর ঘটনার রাতে ভিকটিম নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে ছিলো। রাতে কোন এক সময়ে দুস্কৃতিকারীরা ভিকটিম ইফতিকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপিয়ে গলা কেটে হত্যা করে চলে মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, পরের দিন সকালে ভিকটিম ইফতির ফোন বন্ধ পেয়ে তার মা পাশের বাসায় ফোন দিয়ে ছেলেকে ডেকে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। পরে পাশের বাসার সেলিনা খাতুন নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের ভেতরে গিয়ে ইফতির গলা কাটা মৃতদেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখতে পায়। পরবর্তীতে সেলিনা খাতুন প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে ভিকটিমের মাকে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থল যায়। পুলিশ ইফতির লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করে। পরে এবিষয়ে ইফতির মামা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পূবাইল থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ সদর থেকে পিবিআই কে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে। পিবিআই গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আসামিদের গ্রেফতার করে।
তিনি আরো জানান, মূলত গ্রেফতারকৃতরা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত ছিল। ভিকটিমদের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের চাঁদা না দেওয়ার কারণে তারা ভিকটিমকে হত্যা করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হলে ভিকটিম ইফতিকে হত্যার সাথে নিজেদের জড়িয়ে অন্যান্য আসামিসহ এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।