গণবাণী ডট কম::
দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে মন্ডপে মন্ডপে এ ধর্মীয় উৎসব শুরু হবে। এবারে দেবী দূর্গা ঘোটকে চড়ে আগমণ ও গমন করবেন। তাই গাজীপুরের ৪৬২টি মন্ডপে চলছে দেবী বন্দনার প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। অনেক মন্ডপে দেবীর প্রতীমায় রংতুলীর আচড় কেটে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। পরানো হয়েছে পোশাক। পাশাপাশি চলছে মণ্ডপ সাজানোর কাজ। গাজীপুর জেলা প্রশাসন, মহানগর পুলিশ ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
গাজীপুর জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গাজীপুর মহানগরসহ জেলার ৫টি উপজেলায় এবার মোট ৪৬২টি মন্ডপে দুর্গার পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এসবের মধ্যে গাজীপুর মহানগরীতে ১২০টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৩৭টি, গাজীপুর সদর উপজেলায় ২৬টি, শ্রীপুরে ৫৯টি, কাপাসিয়ায় ৬৮টি এবং কালীগঞ্জে ৫২টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এসব পূজা মন্ডপের মধ্যে গাজীপুর মহানগরীতে ১৪টি এবং কালীগঞ্জে ১৪টি ও কাপাসিয়ায় ৫টি পূজা মন্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সব বিষয় বিবেচনায় রেখে জেলার সকল পূজা মন্ডপের শান্তি, শৃঙ্খলা রক্ষায় ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় পূজা-নির্বিগ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য গ্রাম পুলিশ, আনসার ও পুলিশের পাশাপাশি র্যা ব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও পূজা আয়োজক কমিটি এবং গাজীপুর জেলা ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তাগণও নিরাপত্তা বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে।
সনাতন ভক্তরা জানান, মহালয়ার মধ্যদিয়ে পূজার সময় গণনা শুরু। ষষ্ঠী পূজার দিন, ২০ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিক পূজা শুরু হবে। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হবে। এবারের পূজায় কৈলাশ থেকে দেবী দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে ধুলা ওড়িয়ে রণ ভঙ্গিতে মর্ত্যে আগমন করবেন। আবার ঘোড়ায় চড়েই তিনি গমন করবেন। সনাতন ভক্তদের বিশ্বাস মতে, এবছরটি তাদের জন্য দূর্যোগময় হবে। যে ভালো কাজ করবে তার জন্য খুবই ভালো, আর যে মন্দ করবে তার জন্য খুবই মন্দ হবে। তাই দেবী দূর্গা সবাইকে মন্দ থেকে দুরে থাকার বার্তা দিয়ে গমণ করবেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা: প্রণয় ভূষণ বলেন, আগামী ২০ অক্টোবর বোধন ও মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এরই মধ্যে জেলার সকল মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন শিল্পীরা। এখন চলছে রং-তুলির আঁচড়ে প্রতিমা রাঙিয়ে তোলার কাজ। পাশাপাশি চলছে সাজ-সজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ। নিরাপত্তার জন্য গ্রাম পুলিশ, আনসার, পুলিশ ও র্যা ব যৌথভাবে কাজ করবে। সকল মন্ডপে সিসিটিভি লাগানো হয়েছে, মন্ডপে নিজস্ব স্বেচ্চাসেবক রয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতি খুব সুন্দর। আশা করি পুজা সকলেল সহযোগীতা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এড. সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, সকল মন্ডপে প্রতীমা তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। এখন মন্ডপগুলোতে প্রতীমায় রঙতুলির আলপনা আর কারুকাজে সাজানো ও পোশাক পরিধানের কাজ চলছে। কয়েকটি মন্ডপকে ঝুকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও জেলার সর্বত্র আমাদের প্রস্তুতি সন্তোষজনক আছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ নিরপাত্তার সব ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করা যায়, এবারের পূজা অত্যন্ত আনন্দঘণ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মূখরভাবে সমাপ্ত হবে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানান, নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করতে সব ধরণের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মন্ডপগুলোর নিরাপত্তায় গ্রাম পুলিশ, আনসার ও পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। র্যা ব টহল থাকবে। থাকবে স্বেচ্চাসেবীদের পাহারা। পুজায় শান্তি শৃংখলা রক্ষায় আমরা তৎপর আছি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি যাতে কোনও অপীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেজন্য আমরা প্রতিটি পূজা মন্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। সিসিটিভি, পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে, র্যা বের ও পুলিশের টহল থাকবে, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। তাছাড়া আয়োজকদের পক্ষ থেকে ৩ ধাপে স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। আশা করি পূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমূখর পরিবেশে সম্পন্ন হবে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, পূজার উৎসবকে শান্তিপূর্ণ করতে আমরা সর্বাত্বক প্রস্তুতি নিয়েছি। নিরাপত্তার জন্য আইন শৃংখলার সকল পর্যায়ের সদস্যরা কাজ করবেন। র্যা ব টহল ও ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা ইতিমধ্যে সকল মন্ডপে ৫শ কেজি করে চাউল বরাদ্দ দিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধর্মের নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও আলোচনা করা হচ্ছে। সামাজিক-সম্প্রীতি সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেও পুজার সম্প্রতি রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। আশা করি পূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমূখর পরিবেশে সম্পন্ন হবে।