গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানাধীন এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের কারখানায় বেতন বাড়ানোর দাবীতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর আগুনে পুড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে কারখানা নিরাপত্তাকর্মী গোলজার হোসেন বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮শ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ঘটনায় জড়িত থানার অভিযোগ পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার আসামীদের বুধবার বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। বিজ্ঞ আদালত শুনানী শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
নিহত পোশাক শ্রমিকের নাম এমরান হোসেন (৩২)। তিনি কুমিল্লা জেলার কসবা থানার টুমবাড়িয়া গ্রামের জহুরুল হকের ছেলে। তিনি স্থানীয় এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ঐ কারখানায় কাজ করতেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গাজীপুরের আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া মো. শের আলী (১৯), কোনাবাড়ী এলাকার মো. রিফাত (১৯), আমবাগ এলাকার খোবায়েত (২০), কোনাবাড়ী কুদ্দুসনগর পুকুরপাড়া এলাকার মো. নূর হোসেন (১৮), আমবাগ এলাকার শান্ত তালুকদার (২১), বাইমাইল এলাকার মো. ইয়াসিন (১৯), কোনাবাড়ী এলাকার মহিদুল ইসলাম (২০), হরিনাচালা সেলিমনগর এলাকার মোঃ তোফালে (২২), আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকার রহিম বাদশা (২২)।
বুধবার রাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনাবাড়ি থানার ওসি কে এম আশরাফ হোসেন।
এর আগে গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কোনাবাড়ীর এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি কারখানায় প্রথমে ভাংচুর ও পরে আগুন দেয় বেতন বাড়ানোর দাবীতে আন্দোলনকারী বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ন্ত্রনে আসার পর ডাম্পিং করার সময় কারখানার ভেতর থেকে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ পুড়ে যাওয়ায় ঐ মরদেহ নারী না পুরুষ তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে নিখোজের স্বজনদের সূত্র ধরে পরিচয় সনাক্ত করা হয়।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানায়, কোনাবাড়ি এলাকার অনন্ত কোম্পানিজের এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি পোষাক তৈরি কারখানায় গত সোমবার শ্রমিক আন্দোলন চলাকালীন নিরাপত্তার কারণে দুপুরের পর কারখানা ছুটি ঘোষনা করা হয়। পোষাক কারখানার শ্রমিকদের চলামান বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলনের কারনে কোনাবাড়ি ও আশে পাশে অন্যান্য ফ্যাক্টরীর শ্রমিকেরা ওইদিন বিকালে বিক্ষোভ করে কারখানায় ভাচুর করার চেষ্টা করে। পোষাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতার বৃদ্ধির দাবির পক্ষে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারী ওই ৯ জনসহ অজ্ঞাতনামা অনুমান ৭০০ থেকে ৮০০ জন শ্রমিক নামধারী বহিরাগত দুষ্কৃতিকারী আসামীরা লোহার পাইপ, রড, কাঠের বাটাম, বাঁশের লাঠি, হাতুড়ী, শাবলসহ মারাত্বক দেশীয় অস্ত্রে সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে। একপর্যায়ে কারখানার মেইন গেইট ও সীমানা দেওয়াল, পিছনের গেইট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এসময়ে নিরাপত্তা কর্মী ও অন্যান্য কর্মচারীরা সম্পদ রক্ষা করার জন্য হামলাকারীদের বাধা দেওয়া হলে তারা ইট পাটকেল ছুরলে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা কারখানার নিচতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরের অফিস কক্ষ, বিভিন্ন মেশিনারিজ, গুরুত্বপূর্ন গার্মেন্টস এক্সোসরিজ ফেব্রিক্স, তেরী পোশাক, ফেয়ার প্রাইজ সপ, জেনারেটর, কমপ্রেসার, এসি ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এক পর্যায়ে তারা পেট্রোল দিয়ে আমাদের কারখানার নিচতলা চার তলা পর্যন্ত অফিস, ফ্লোর, ফেব্রিক্স গোডাউন, কাটিং এবং সুইং সেকশনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভি্সের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করার পর এক শ্রমিকের মরদেহ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জিএমপির কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ হোসেন বলেন, ঘটনার সময়ে আক্রান্ত কারখানা ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অনেক আসামীকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়িতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ এবিএম ফ্যাশন কারখানা পরিদর্শন করেছেন শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো: মাসুদ আহমদ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মাহবুব আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতেহ মো. শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, জিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, জিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার ( উত্তর বিভাগ) মো: কামাল হোসেন, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো: সানোয়ার হোসেন, জিএমপির কোনাবাড়ি থানার ওসি কে এম আশরাফ হোসেন প্রমুখ।