গণবাণী ডট কম:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের জীবনের যে কোন প্রয়োজনে আনসার বাহিনীকে যখনই আহবান করা হয়,তখনই তারা দায়িত্ব পালন করে। এমনকি তারা বর্তমানে বিভিন্ন দুতাবাসসহ বিভিন্ন এলাকায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের বৃহত্তম বাহিনী হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। জননিরাপত্তা রক্ষার্থে যে কোনো অশুভ তৎপরতা মোকাবেলা করতে হবে এবং সততা সাহস আর আন্তরিকতার সাথে আপনারা সেটা রুখে দাড়াবেন। জনগণ ও বিনিয়োগের নিরাপত্তার শান্তি পরিবেশ ধরে রাখা এটা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সামগ্রিত উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিবেশ। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ধারাবাহিকতা। কজেই সেই পরিবেশ রক্ষার জন্য সকলকে আমার অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৪তম জাতীয় সমাবেশ-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের সফিপুরে আনসার ভিডিপির সমাবেশে যোগ দিতে প্যারেড মঞ্চে উপস্থিত হন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর প্রধানমন্ত্রী একটি ছাদখোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
প্যারেড পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীকে প্যারেডের মাধ্যমে আনসারের বিভিন্ন ইউনিট সালাম জানায়। পরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় আনসার বাহিনীতে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮০ জনকে আনসার পদক পরিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে আরো বলেন, ৬১ লাখ সদস্যের আনসার বাহিনীতে দুটি নারী ব্যাটলিয়ন ও একটি স্বতন্ত্র ব্যাটলিয়নসহ ৪২টি ব্যাটলিয়ান রয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি ব্যাটলিয়নের সদস্যরা পার্বত্য এলাকায় শান্তি শৃংখলার রক্ষা ও উত্তরণে সেনাবাহিনীর সংগে দুর্ঘম পাহাড়ী এলাকায় রাস্ট্রের স্বাধীণতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এখানে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে অনেকে আহত হয়েছে অথবা শহীদ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আনসার বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যখন ২০১৩ সাল ১৪ সাল, এমনকি ২০২৩ সালেও আমরা দেখেছি, রেলে আগুন দেওয়া, রেল লাইন কেটে ফেলা, মানুষকে হত্যা করা, বিএনপি জামাত জোট যে ধ্বংসাত্বক কাজ করেছিল, সেখান থেকেও জাতীয় সম্পদ রক্ষায় আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসি তখন থেকেই এ বাহিনীর উত্তর উত্তর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা গ্রাম উন্নয়নে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমার গ্রাম আমার শহর, আমার বাড়ি আমার খামার, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আনসার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এছাড়াও যে কোন দুযের্যাগ, দূর্বিপাকে আমাদের আনসার বাহিনী কাজ করে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার বাহিনী জাতীয় যেকোনো প্রয়োজনে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আনসার বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ১৭ কোটি মানুষের দেশ। কাজেই এ মানুষের ভাগ্যর উন্নয়ন করা, তাদের নিরাপত্তা বিধান করা-এটাই আমাদের কাজ।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ এবং মাদকের হাত থেকে দেশকে আমরা রক্ষা করতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সব সময় অব্যাহত থাকবে। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখেই আমাদের আনসার বাহিনীর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে এবং আগামীতে করে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে এ বাহিনীর উন্নয়নে পুরাতন আইন পরিবর্তন করে আমরা নতুন আইনে আনসার ব্যাটলিয়ন আইন -২০২৩ আমরা ইতিমধ্যেই পাস করে ফেলেছি। এতে করে অন্য্যান্য বাহিনীর সদস্যদের মতই এ বাহিনীর সদস্যদের প্রথম দিন থেকেই স্থায়ী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা আগে থেকেই স্থায়ী করণের কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু করেছিলাম। এ আইনে আমরা সেই সুবিধা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নারী ভিডিপি সদস্যদের অত্যন্ত আকর্ষণীয় ডিজাইনের নতুন শাড়ীও আমি প্রবর্তন করেছি।
তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ এর নির্বাচনের বিজয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করে আজকে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়ণশীল দেশের কাতারে নিয়ে এসেছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। তখন আমাদের আরো আন্তরিকতার সাথে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, আমরা চাই আমাদের প্রত্যেকটা বাহিনী, বিশেষ করে আনসার বাহিনী স্মার্ট বাহিনী হিসাবে গড়ে ওঠবে এবং দেশের উন্নয়নের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা গ্রাম নিয়ে আমরা নিরাপদ করতে চাই। আমাদের গ্রামগুলো স্মার্ট গ্রাম হিসাবে গড়ে ওঠবে। সেখানে কোন মানুষ গ্রামহীন থাকবে না, ভুমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। আমরা এখন যেমন মানুষের ঘর করে দিচ্ছি,আমরা সেভাবেই প্রতিটা মানুষের জীবন, যাপন সুন্দরভাবে করার ব্যবস্থা করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে, সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে আনসার বাহিনী ভূয়সী প্রশংসা পায়। অনেক প্রতিযোগীতায় দক্ষতার পরিচয় দেয়। কাজেই গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যাতে অব্যাহত থাকে, সেটাও আমরা করতে চাই। কারণ মানুষের পেটের ভাতের সাতে সাথে তাদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা, আর খেলাধুলা, ক্রীড়ামোদের মধ্যে দিয়ে ছোট শিশূকে গড়ে তোলা সেটাও আমাদের একটা লক্ষ। সে লক্ষ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আনসার বাহিনী বাংলাদেশ গেমসে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। এজন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ ধারা অব্য্যাহত রাখতে হবে। এ বাহিনীতে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। যাতে এখানে আরো ক্রীড়াবিদ তৈরী হয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জন করে আনতে পারে তার জন্য আমরা ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। আজকে আমরা ঘর বাড়ী বিদ্যুত দিয়েছি, আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠেছে। যেটা আমার একমাত্র লক্ষ ছিল। কারণ আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। আর সেটা আমরা আজকে করতে পেরেছি। যে কোন অবস্থা মোকাবেলা করার মত আমাদের সে সক্ষমতা আছে। আনসার ভিডিপি সদস্যবন্দ, আমি আপনাদের বলব,আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সকলকে কঠোরভাবে পরিশ্রম ও সততার সাথে কাজ করতে হবে। দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসাবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সৃমদ্ধ ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের স্বপ্ন আমরা পুরণ করবো। সেই সাথে ডেল্টা প্ল্যান তৈরী করে দিয়েছি, জলবায়ু অধিকার থেকে এ ব-দ্বীপ যাতে রক্ষা পায়, দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ যেন সুরক্ষিত থাকে, উন্নত জীব পায় এবং প্রত্যেকে যেন নিজের পায়ে দাড়াতে পারে, বিশেষ করে আমাদের তরুন সমাজ, তারাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শেষ করে ১১ জেলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার নির্মাণ শীর্ষ ১১টি প্রকল্প, আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে আনসার অরণ্য নিবাস প্রকল্প, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য আনসার অফিসার মেস ও রেস্ট হাউস নির্মাণ প্রকল্প, ৯টি উপজেলায় আনসার ও ভিডিপি মডেল কার্যালয় নির্মানের ফলক উম্মোচন করেন।
পরে তিনি আসনার সদস্যদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী অনির্ধারিত বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি চমৎমার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আমরা নিজেরা নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করব। কারো উপর নির্ভরশীল থাকব না। এজন্য তিনি দেশের আনসার সদস্যদের আরো আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। তিনি বলেন, আমরা নিজেদের দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠার সাথে পালন করেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারব।
পরে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত মেলার বিভিন্ন স্টল গুরে দেখেন। এসময় তিনি নগদ টাকা দিয়ে ১ হাজার টাকা দামের থামি কাপড়,পাঁচ সেট করে টু পিস কাপড়, ৭ ধরণের আচার, কক্সবাজার থেকে আনা ঝিনুকের গয়না ক্রয় করেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এমপি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রোমানা আলী টুসি এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, আক্তারুজ্জামান এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তিন বাহিনী প্রধান, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম উদ্দিন, আনসার ও ভিডিপি অ্যাকাডেমির কমান্ড্যান্ট মো. নূরুল হাসান ফরিদী, বাহিনীর উপমহাপরিচালক, অন্যান্য কর্মকর্তা ও আনসার- ভিডিপির সদস্যরা।