গণবাণী ডট কম:
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে, যানজট এড়াতে রাজধানীর বিমান বন্দর-গাজীপুর রুটের বাস র্যা পিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ৭টি ফ্লাইওভার যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। রোববার (২৪ মার্চ) সকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ফ্লাইওভার ৭টি উন্মুক্ত করেন।
২০১২ সালে শুরু হওয়ার পর একযুগ পেরিয়ে গেছে। কয়েক দফা সময় এবং ব্যয় বাড়ানো হলেও এখনো প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হয়নি। তবে, আশা করা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে পুরো প্রকল্প যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা যাবে।
কাজ অসমাপ্ত রেখেই উম্মুক্ত হওয়া ফ্লাইওভারগুলো হলো, রাজধানীর শাহজালাল বিমান বন্দরের বাম ও ডানপাশের ৩২৩ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দুটি, জসিম উদ্দিন রোডের ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্য, গাজীপুরা এলাকার ১৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ইউটার্ন-১ ফ্লাইওভার, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ইউটার্ন-২ ফ্লাইওভার, ভোগড়া এলাকায় ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার এবং জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ৫৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানী হতে সড়ক পথে গাজীপুরের দুরত্ব ২৩ কিলোমিটার। যানজট না থাকলে খুব সহজেই গাজীপুরে আসা যায়। দেশের অন্যান্য স্থানের সাথেও গাজীপুরের যোগাযোগ ভালো। গাজীপুরকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এপথ দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৭টি এবং উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষ এপথ ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে গাজীপুরের গুরুত্ব অপরিসীম।
রাজধানীর সাথে দেশের ঐ অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করতে ২০১২ সাল হাতে নেয়া হয় রাজধানীর বিমান বন্দর থেকে গাজীপুর ২০.৫ কিলোমিটার সড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য বিআরটি প্রকল্প। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন নির্ধারণ করা হয়। আর সময় বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যয়ও বেড়েছে। সবশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্প চালু হওয়ার পর এক যুগ পেরিয়ে গেল। তারপরেও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। এখন আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরে চালু হতে পারে বিআরটি।
ফ্লাইওভারগুলো উম্মুক্ত করার সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে ৭টি ফ্লাইওভার উদ্বোধন নয়, উন্মুক্ত করা হলো। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এগুলো উন্মুক্তের ফলে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে৷ বিগত দিনে ঈদের সময় গাজীপুরে যে ভোগান্তি হয়, এবার আর তা হবে না।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যেই বিআরটি প্রকল্পের ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই বিআরটি প্রকল্পের বাস চলাচল করবে।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, এই প্রকল্পের কারণে বছরের পর বছর ভোগন্তি হয়েছে। আশা করি, আর ভোগান্তি হবে না। আমিও নিজেও অন্তত ৫০ বার এই প্রকল্প দেখতে এসেছি। এসময় তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন নেতিবাচকভাবে না নিয়ে একটু ভাবুন। দেখুন এতোগুলা প্রজেক্ট হয়েছে, এরমধ্যে একটি প্রজেক্ট একটু সমস্যা হয়েছে। এটি আমরা স্বীকারও করেছি এবং সমস্যাটি কোথায় সেটিও বলেছি।
ফ্লাইওভার উম্মুক্ত করা উপলক্ষে গাজীপুর মহানরীর ভোগড়া বাইপাস প্রান্তে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান, বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক (সড়ক) এ এস এম ইলিয়াস শাহ্, বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক (সেতু) মো: মনিরুল ইসলাম খান, ঢাকা সড়ক সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ সাইফুদ্দিন, বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান, মোঃ জাকির হোসেন ও আব্দুর রহমান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ( ট্রাফিক) মোঃ আলমগীর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তবে, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রকল্পের সফলতা ও সুফল প্রাপ্তী নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের যুক্তি প্রকল্পের সেবা পেতে যাত্রীকে ফ্লাইওভার দিয়ে বিআরটির মাজখানে গিয়ে বাসে ওঠতে হবে। ফ্লাইওভার নির্মান করতে গিয়ে মহাসড়কের দুই পাশের ফুটপাথ বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘ পথের কোথাও যাত্রী ও পথচারীদের সড়ক পারাপারের জন্য কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। রাখা হয়নি প্রয়োজনীয় ইউটার্ন। এসব বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সরাসরি কোন জবাব দেন না। তাদের যুক্তি, আমাদের দেশে এ ধরণের প্রকল্প এটাই প্রথম। চালু হবার পর কি সমস্যা হয়, সেটা দেখে পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র আরো জানায়, শুরুতে প্রকল্পের দৈর্ঘ ছিল চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত। কিন্তু পরে সময় বৃদ্ধি করে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হলেও প্রকল্প সংকুচিত করে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কেরানীগঞ্জের পরিবর্তে দূরত্ব কমিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে শেষ করা হয়েছে।
বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারের ৪টি বিভাগ। প্রকল্পে অর্থায়ণ করছে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি এডিবি,এএফডি এবং ডিইএফ। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চায়না গেজহুবা গ্রুপ, জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-পারেটিভ।