গণবাণী ডট কম:
ঈদকে সামনে রেখে শিল্প নগরীর গাজীপুরের অধিকাংশ শিল্প কারখানা সোমবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছুটি পেয়ে একসাথে নাড়ীর টানে বাড়ীর উদ্দেশ্যে মহাসড়কে নেমে এসেছেন লাখ লাখ শ্রমিক। ফলে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মসিংহ মহাসড়কে জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনের অভাবে চরম ভোগান্তীতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপে উভয়পাশে প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে, পরিস্থিতি যানবাহনের গতি বাড়াতে কাজ করছে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ।
গাজীপুরের শিল্প পুলিশের সূত্র মতে, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোশা্ক কারখানাসহ ছোট বড় প্রায় ৫ সহস্রাধিক হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে অধিকাংশ ছুটি হয়েছে আজ।সোমবার। বেলা ১১টার পর থেকেই কারখানাগুলোতে ছুটি দেয়া শুরু হয়। শ্রমিকরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। তারা ছুটি পেয়েই গোছানো ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে। ফলে একসাথে দুটি মহাসড়কেই বেড়েছে যাত্রীদের চাপ, দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট ও যানজট। ধারণা করা হচ্ছে যাত্রীর চাপ আজ রাত অবধি বাড়তে থাকবে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দুই মহাসড়কেই দুপুর পর্যন্ত যাত্রী ও যানবাহন ছিল স্বাভাবিক। তবে, দুপুরের পর বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কল-কারখানায় বেতন ভাতা দিয়ে ছুটি ঘোষণা করার পর হঠাৎ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রীদের ভীড় বাড়তে থাকে। অনেক এলাকায় মহাসড়ক চলে যায় যানবাহনের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের দখলে। এ জনস্রোতের কারণে অনেক স্থানে যানজটের সৃষি।ট করে। অপরদিকে, ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও যানবাহন না পেয়ে নারী ও শিশুসহ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অনেক শ্রমিক স্ত্রী সন্তান ও মালপত্র নিয়ে মহাসড়কের পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও যানবাহন পাচ্ছেন না। অনেকে নিরুপায় হয়ে খোলা পিকআপ, ট্রাকে চড়ে বেশী ভাড়া দিয়ে ঝুকি নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
ঢাকা-টা্ঙ্গাইল মহাসড়কে দুপুরের পর গাজীপুরের কোনাবাড়ী, শফিপুর এলাকায় কয়েকটি পয়েন্টে যাত্রীর চাপ বেশী লক্ষ করা যায়। এ মহাসড়কের কালিয়াকৈরের পল্লী বিদ্যুত এলাকা থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
চন্দ্রা মোড়ে গাড়ীর জন্য অপেক্ষমান সিরাজ উদ্দিন বলেন, আমি আগে থেকেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলাম। সকাল ১০টার দিকে বেতন-ভাতা ও ছুটি পেয়ে বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আগে আগে বাস স্ট্যান্ডে এসেছি। কিন্তু এখানে তো দেখি আমার আগে হাজার হাজার মানুষ এসেছে।
এখানেই স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছেন জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ঘন্টা খানেক ধরে দাড়িয়ে আছি, গাড়ীতে ওঠতে পারছি না। তিনি বলেন, আমার সাথে স্ত্রী না থাকলে ট্রাক পিকআপে চড়ে চলে যেতাম।
ফারুক নামের এক শ্রমিক বলেন, তিনি জয়দেবপুর এলাকার স্প্যারো এপারেলসে কাজ করেন। সকাল ১১টার বেতন ও ছুটি পেয়ে বহু কষ্টে চন্দ্রা এসেছেন। এখন পরের গন্তব্যের গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছেন।
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দুপুরের দিকে কারখানা ছুটি হওয়ার যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফলে চন্দ্রায় যানবাহনে ধীরগতি আছে। আজকাল একটু চাপ হবেই৷ ঈদ যাত্রা স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
সোমবার দুপুরের পর থেকেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। অপরদিকে, যাত্রী পেয়ে মহাসড়কের গাজীপুর এলাকার বিভিন্ন যানবাহন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ায় হঠাৎ করে মহাসড়কে যানবাহন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে যাত্রীরা অপেক্ষা করতে করতে গাড়ী ধরার আশায় মহাসড়কে ওঠে পড়েছে। ফলে জনস্রোতের কারণে যানবাহনের গতি কমে গেছে।
জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় আলিম উদ্দিন স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে অপেক্ষা করছেন। চাতক পাখির মতো ঢাকার দিকে তাকিয়ে আছেন, কখন একটি বাস আসবে, স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। তিনি বলেন, প্রায় দুই ঘন্টা দাড়িয়ে আছি। গাড়ীতে উঠতে পারছি না। এত ভীড়ের মধ্যে মহিলা ও শিশু নিয়ে কি করবো বুঝতে পারছি না। তার মতো অনেকেই ঠায় দাড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছেন না। অনেকে বিকল্প ব্যবস্থায় বেশী ভাড়ার যাত্রী হয়েছেন।
শেরপুরের বাসের জন্য দাড়িয়ে আছেন মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, আমার সাথে আমার মা আছেন। আমরা দুজন প্রায় এক ঘন্টা হবে, দাড়িয়ে আছি। গাড়ী পাচ্ছি না।
তবে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া, বোর্ড বাজার, গাজীপুরা, টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় ধীরে ধীরে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। এ মহাসড়কে যানবাহনের সংকট থাকলেও জয়দেবপুর এলাকা পেরিয়ে গেলে মহাসড়কে তেমন যানজটের সমস্যা নেই।