গণবাণী ডট কম :
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমস্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে। একটি চক্র দেশ-বিদেশে অবস্থান করে এই ব্যবসা পরিচালনা করছে। তৃণমূল থেকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সাথে উচ্চ পর্যায়ের কেউ জড়িত থাকলেও তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
রবিবার (২৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর মধুমিতা রোডের অগ্রণী টাওয়ারে র্যা বের ভিওআইপি বিরোধী অভিযান পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গতকাল শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত র্যাবের এই অভিযান চলে। অভিযানে বিপুল পরিমান অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামসহ মূলহোতা ও তার সহযোগিকে আটক করেছে র্যাব।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সরকার একটি নিয়মতান্ত্রিক টেলিকমিউনিকেশন পদ্ধতি চালু করতে চায়। টেলিকমিউনিকেশন খাতে যত অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাকারী আছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাই। বাংলাদেশের রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) কল বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ওই অপরাধীদের একটি কঠোর বার্তা দিতে চাই। সেই সঙ্গে মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধিত ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলারদের অবহেলার কারণে অপরাধীরা যেন কোনো সুযোগ তৈরি করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধীরা দেশের যেকোনো প্রান্তে, যত কৌশলেই অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চেষ্টা করুক না কেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রাখবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই ব্যবসা সরকারের রাজস্ব আহরণে বাধার সৃষ্টি করছে। যে কোন মূল্যে এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে ভিশন ২০৪১ এ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকলকে কাজ করতে হবে।
এসময় প্রতিমন্ত্রীর সাথে ছিলেন, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেল (এনটিএমসি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, র্যাব-১ এর সিইও লে: কর্নেল মোসতাক আহমেদ, র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রোববার বেলা ১১টার দিকে র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন চলমান অভিযানের ওই ভবনের নিচতলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন।
এ সময় খন্দকার আল মঈন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার থেকে টঙ্গীর মধুমিতা রোডের অগ্রণী টাওয়ারের ১২ তলায় অভিযান চলছে। এই পর্যন্ত অভিযানে বিপুল পরিমান অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামের সাথে ৩২টি সিম বক্স ডিভাইস ও সাড়ে ১১ হাজারের অধিক বিভিন্ন কোম্পানির সিম পাওয়া যায়। এ সময় মূলহোতা তাজুল ইসলাম ও সিম সরবরাহকারী হারুন অর রশীদকে আটক করা হয়েছে। অগ্রণী টাওয়ারের আশপাশে একাধিক ভবনে এ ধরনের অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সন্ধান পাওয়া গেছে।
টঙ্গীর অগ্রণী টাওয়ারে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা শুরুর বিষয়ে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, তাজুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লা। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি অতিক্রম করতে পারেননি। ২০০৭ সালে তিনি ডেফোডিল কোম্পানিতে লাইনম্যানের চাকুরিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে এই কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পর তার সংরক্ষনে থাকা যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রথমে ঢাকার সূত্রাবাদে ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৮ সালে টঙ্গী এলাকার জনৈক এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে সখ্যতার মাধ্যমে মধুমিতা অগ্রণী টাওয়ারের ১২তলায় ৩টি ফ্ল্যাট ক্রয় করে এই ব্যবসা শুরু করেন তাজুল ইসলাম। আটক হারুন অর রশীদ ৬৫ টাকা করে বিভিন্ন কোম্পানির সিম ক্রয় করে তাজুল ইসলামকে ৭২ থেকে ৭৫ টাকায় সরবরাহ করতো। তবে হারুন অর রশীদ ৭ থেকে ১০ টাকার মধ্যেও সিম ক্রয় করতে পারতো বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, বিটিআরসি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, অবৈধ টেলিযোগাযোগ স্থাপনার মাধ্যমে চক্রটি প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ আন্তর্জাতিক কল মিনিট অবৈধভাবে দেশে টার্মিনেট করছিল। এতে প্রতিদিন তাদের আয় হতো লক্ষাধিক টাকা। তাতে সরকার কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। তারা এক বছর ধরে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।