গণবাণী ডট কম:
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকেই অঞ্চলটিকে বহির্বিশ্ব থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ভারত সরকার। কাশ্মীরে ৫৮ দিন ধরে চলা টানা অবরোধে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে ভারত-চীন সীমান্তবর্তী লাদাখেও। ভারত সরকারের কাশ্মীরের প্রতি এমন আচরণে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হিমালয়ের আরেকটি অঞ্চল লাদাখের জনমানুষ ও রাজনৈতিক নেতারা।
৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ৩৭০ নং ধারা সংবিধান থেকে বাতিল ঘোষণা করে ভারত সরকার। সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার প্রায় সব রাজনৈতিক নেতাকে গৃহবন্দী করে ফেলা হয়। অনেককে গ্রেপ্তারও করে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। অনাকাঙ্ক্ষিত বিক্ষোভ এড়াতে কারফিউ জারি হয় পুরো রাজ্যে। একইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা ও মোবাইল সংযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ সেনা মোতায়েন করে বিজেপি সরকার। এমনকি কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকরা ভারতীয় সেনাদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন, এমন তথ্যও উঠে এসেছে। এসব কারণেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বৌদ্ধসংখ্যগরিষ্ঠ লাদাখ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক মহল।
এদিকে ৩১ অক্টোবর থেকে লাদাখকে পুরোপুরি কেন্দ্রের অধীনে শাসন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কাশ্মীরের মত স্বায়ত্তশাসন ভোগ না করলেও অন্য রাজ্যের তুলনায় সংস্কৃতিগতভাবে বেশ স্বাধীনতা ভোগ করে এসেছে চীন-সীমান্তবর্তী অঞ্চলটি। কাশ্মীরের প্রতি দমনমূলক আচরণকে ভারতীয় সরকারের কট্টর হিন্দুত্ববাদীতা হিসেবেই দেখছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে লাদাখেও। কারণ লাদাখ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি অঞ্চল। ভারতের অন্য রাজ্যের সংস্কৃতি থেকে এই অঞ্চলের সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার ওপর অঞ্চলটি চীনের সীমান্তে অবস্থিত।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ কলোনি থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই লাদাখের বৌদ্ধরা ভারত সরকারের কাছে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর থেকে আলাদা হবার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে ৫ আগস্ট সরকার জম্মু ও কাশ্মীরকে ভাগ করে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন লাদাখের বৌদ্ধরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে বিচলিত হয়ে পড়েছে অঞ্চলটির বৌদ্ধসমাজ।
লাদাখ বৌদ্ধ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সোনাম দাওয়া বলেন, ‘কাশ্মীর থেকে আলাদা হয়ে আমরা উদযাপন করেছিলাম, সত্য। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ভালো কিছুর সঙ্গে সঙ্গে খারাপ কিছুও আসে। লাদাখের মানুষ কখনও নিজেদের স্বাধীনতা বিক্রি করতে রাজি হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছ থেকে নিশ্চয়তা চাই যে আমাদের জমি, জনগণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিরাপদ থাকবে।’
উল্লেখ্য, হিমালয়ের এই অঞ্চলটির আয়ের মূল উৎস পর্যটন খাত। গত বছরও প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক লাদাখে বেড়াতে এসেছিল। কিন্তু এ বছর পর্যটকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ লাখ। খবর : এপি।