গণবাণী ডট কম:
তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনী গত বুধবার থেকে উত্তর পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছে তীব্রভাবে চলছে। ফলে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক আদেশে ওই অঞ্চলটিতে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেবার পরই সেখানকার কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে তুর্কি বাহিনী এবং সেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তুরস্ক দাবি করছে যে, রাস আল-আইন শহরটি তারা দখল করে নিয়েছে, কিন্তু কুর্দিরা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করছে।
ব্রিটেন-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১২০ জনেরও বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে ২০ জন, এবং এক লক্ষ লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। উত্তর পূর্ব সিরিয়ার রাস আল-আইন শহরটির ওপর কামানের গোলা বর্ষণ করা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে আকাশে উঠছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। শোনা যাচ্ছে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ। তুরস্কের যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে চক্কর দিচ্ছে ।
এটা স্পষ্ট যে, উত্তর পূর্ব সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেবার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তই তুরস্কের এ অভিযানের সূচনা করে। এমনকী কোবানি শহরের কাছে যে মার্কিন ঘাঁটি আছে-সেখানেও শুক্রবার সন্ধ্যায় তুরস্কের কামানের গোলা এসে পড়ে । তবে এতে কেউ আহত হয় নি।
কুর্দি মিলিশিয়ারা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করেছিল, তবে তুরস্ক এই মিলিশিয়াদের সন্ত্রাসী বলে মনে করে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলে তাদের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযান চালানোর পথ খুলে যায়। এর পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত তার প্রশাসনের ভেতরে এবং রিপাব্লিকান নেতাদের দিক থেকেও ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। ফলে এখন তুরস্কের এই অভিযান থামানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর থেকেই চাপ বাড়ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার এ অভিযানের ‘গুরুতর পরিণতির’ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মেনুশিন নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য ইতিমধ্যে বলেছেন যে তিনি তুরস্ক এবং কুর্দিদের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চান।
কিন্তু তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেছেন, সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি চাইছেন উত্তর সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়া-মুক্ত একটি নিরাপদ এলাকা তৈরি করতে যেখানে সিরিয়ান শরণার্থীদের বসতি গড়ে তোলা হবে।
কুর্দি নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের ”পিঠে ছুরি মারার” অভিযোগ এনেছেন। কুর্দি মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে যে বন্দীশিবিরগুলো আছে তাতে হাজার হাজার ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাকে আটক রাখা হয়েছে।কুর্দি নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযানের ফলে সিরিয়ার কারাগারে বন্দী ইসলামিক স্টেট যোদ্ধারা পালিয়ে যেতে পারে এবং আবার জোটবদ্ধ হতে পারে এমন আশংকা বাড়ছে। উত্তর পূর্ব সিরিয়ার কারাগারে কুর্দিরা কয়েক হাজার আইএস উগ্রপন্থীকে বন্দী করে রেখেছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের আটক রাখা হয়েছে পৃথক শিবিরে।
তাই তুরস্কের এ আক্রমণের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভেতরেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। খবর : বিবিসি।