গণবাণী ডট কম:
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হেনে কিছুটা দুর্বল হয়ে শক্তি হারিয়েছে এবং গতি কমে গিয়ে এটি অতি প্রবল থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে শনিবার ১২টার দিকে ৮ ঘন্টায় কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশের উপকলীয় এলাকায় প্রবেশ করে। সুন্দরবন এলাকায় আসার পরে এটি আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। ভোর নাগাদ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশ উপকুলে প্রবেশ করেছে। এটি আরো শক্তি হারিয়ে বর্তমানে স্থল নিম্নচাপ হিসাবে বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান, ঝড়ের শক্তি কমে আসায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে রবিবার বিকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
শনিবার রাত ৯টায় ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১২৫ কিলোমিটার বাতাসের গতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে এই ঘূর্ণিঝড়। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা ঝড়টি পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে ফ্রেজারগঞ্জ, সাগরদ্বীপ, বকখালি হয়ে স্থলভাগে ঢোকার পর অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে শুধুমাত্র প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে আকার নেয় বুলবুল। তিন-চার ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় সুন্দরবন বদ্বীপ এলাকাতেই। তারপর বুলবুল এগিয়ে আসে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দিকে। স্থলভাগে ঢোকার সময় তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারের আশেপাশে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পরিণত হয়েছে গভীর স্থল নিম্নচাপে।
বর্তমানে স্থল নিম্নচাপটি ঘণ্টায় ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ মাঝারি থেকে ভারী কিংবা অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এর প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছাসের সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে রবিবার বিকেল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে যা সোমবার পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “বুলবুল এখন স্থল নিম্মচাপ হিসাবে অবস্থান করছে বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও খুলনা এলাকায়। আমরা স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছি। ১০০ কিলোমিটার বেগের ঝড় এসে একেবারে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাবে তেমন আশঙ্কা আর নেই। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা লাগতে পারে।”
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনানা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। নিম্নচাপটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হতে হতে এক সময় মিলিয়ে যেতে পারে।