গণবাণী ডট কম:
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুকি নিয়ে চাকুরী রক্ষার জন্য গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। সারাদেশে অঘোষিত লক ডাউন চলমান থাকলেও রবিবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্প কারখানা চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মাচ থেকে প্রথম দফায় ৪ এপ্রিল ও পরে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। একই সাথে স্থল, জল ও আকাশ পথে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ব্যতিত সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
একই সাথে দেশবাসীকে ঘরে থাকার এবং সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতেই নিষেধ করা হয়। দেশে এক ধরণের অঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমনকি সরকারের নির্দেশনা বা¯Íবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়থা করার জন্য সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এমনকি ঘরে থাকা এবং সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী আরো কঠোর হবে বলে আন্ত: বাহিনী গণসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর) থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেককে জরিমানাও করা হয়। লম্বা ছুটি পেয়ে দেশের অন্যান্য শ্রেণী ও পেশার মানুষের মতো তৈরী পোশাক খাতের শ্রমিকরাও আসন্ন সংকট মোকাবিলার সহজ উপায় হিসাবে অনেকে নিজ নিজ গ্রামের বাড়ীতে চলে গিয়েছিল।
অঘোষিত লক ডাউনের কারণে কর্মহীন ও অসহায় দরিদ্র মানুষকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়। যাতে মানুষ ঘরে থাকে। খাদ্য সহায়তা বিতরণের সময় সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্চে, তাই সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার স্বার্থে খাদ্য সহায়তা দেয়ার আগে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে জানানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো মানুষকে ঘরে রাখা এবং সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখা। আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো।
৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর আক্রমণে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ লাখ ১৭ হাজার ৮৬০ জন। আক্রান্ত এ বিপুল লোকের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৯৯০ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৯ হাজার ২০৩ জন।
অপরদিকে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৮জনে। নতুন আরো ৯জনসহ করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় চারজনসহ ইতিমধ্যে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ৩০ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৩২ জন।
কিন্তু দেশের এমন পরিস্থিতিতেও আগামীকাল গাজীপুরের সকল শিল্প কারখানা চালু হচ্ছে, এসব শিল্পকারখানায় কাজে যোগদান করতে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা ফিরছে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে। যাত্রীবাহি বাস, ট্রেনসহ বিভিন্ন গণ পরিবহণ বন্ধ থাকলেও পায়ে হেটে, ট্রাকে চড়ে, বিভিন্ন উপায়ে ফিরছে কর্মীজীবি লোকজন। সকাল থেকে ঢাকা-ময়যনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রিক্সা, অটোরিক্সা, পিকআপভ্যানে বা পায়ে হেটে লোকজনকে ফিরতে দেখা যায়। পেটের দায়ে কাজে ফিরতে হবে তাই বাধ্য হয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন এসব নিরুপায় শ্রমিকরা। কাজে যোগ না দিলে চাকরী হারানোর ভয়, তাদের কাছে করোনায় ঝুকি থেকেও বেশী।
এ যেন এক বিপরীত যাত্রা। পোশাক শ্রমিকদের কাজে ফেরার অমানবিক যাত্রা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হচ্ছে সমালোচনা। দেশের সকল মানুষের করোনায় আক্রান্ত হবার ঝুকি থাকলেও পোশাক শ্রমিকরা কি করোনার ঝুকি মুক্ত? তাদের ঘরে থাকার বা সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার প্রয়োজন নেই? সবার মঙ্গলের কথা চিন্তা করে সাধারণ ছুটি পর্যন্ত পোশাক কারখানাগুলো কি বন্ধ রাখা যেত না?