কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সাফাইশ্রী গ্রামের এক নারী করোনা পজিটিভ (আক্রান্ত) হয়েছেন এমন সন্দেহে নিজেই হোম আইসোলেশন ছিলেন। এই অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয় এবং দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। এই অবস্থায় কি করবে জ্ঞানশূন্য হয়ে তার দুই শিশুসন্তান ফোন করেন কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা: ইসমত আরার কাছে। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঐ শিশুকন্যার কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মাকে বাঁচানোর আকুতি শুনে হতবিহবল হয়ে পড়েন। তিনিও উক্ত নারীকে বাঁচাতে উদগ্রীব এবং উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করেন গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া আসনের সংসদ সদস্য ও বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমিকে। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে তিনি সাংসদকে জানান, একটি বাচ্চা মেয়ে তার মাকে বাঁচানোর জন্য কান্নাকাটি করছে, তার মা শ্বাসকষ্টে ভুগছে এবং দম বন্ধ হয়ে মারা যাবার মত অবস্থা হয়েছে এখন কি করবো? সিমিন হোসেন রিমি তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে উক্ত বাচ্চা মেয়েটির ফোন নাম্বার নিয়ে শিশু কন্যাটিকে ফোন করেন। পরে তিনি উক্ত বাচ্চা মেয়ের কাছ থেকে ঘটনা শুনে স্পিকার ফোনে তিনি উক্ত নারীর সাথে কথা বলেন এবং তাকে উপুড় হয়ে শুতে বলেন। এই অবস্থায় উক্ত নারীকে বুকের নিচে একটি বালিশ দিয়ে বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিতে বলেন। এমপি রিমির নির্দেশনা মেনে উক্ত মহিলা শ্বাস নিতে চেষ্টা করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে অনেকটা সুস্থ বোধ করেন। পরে তিনি গাজীপুর সিভিল সার্জন ও গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সহযোগিতায় রাতেই অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে ঐ নারীকে গাজীপুর শহীদ তাজউদদ্দীণ আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী সুস্থ আছেন।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ইউএনও সাহেব গত পরশু সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে যখন আমাকে বিষয়টি বলেন, তখন তাকে খুবই উদ্বিগ্ন এবং বিচলিত মনে হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, স্যার একটি বাচ্চা মেয়ে ফোন করেছে কান্নাকাটি করছে তার মায়ের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, আমি কি করব? এখন কি করব স্যার।
তখন আমি তাকে বললাম, তুমি শুধু বাসার ওই ফোন নম্বরটি দাও, যে নাম্বার থেকে তোমাকে ফোন করেছে।
সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমি তার কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে যখন ওই মেয়েটাকে ফোন করলাম তখন মেয়েটা শুধু কাঁদছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার মা কি কথা বলতে পারছে? তখন মেয়েটি জানায়, যে কথা বলতে পারছে কিন্তু বলতেছে দম বন্ধ হয়ে আসছে। তখন জানতে চাইলাম তুমি কি তোমার মায়ের পাশে? তখন মেয়েটির জানায়, না। মা আমাদেরকে গত ছয় দিন যাবৎ একটি ঘরে আলাদা করে রেখেছে। আমার আব্বা এক বছর আগে মারা গিয়েছেন। তখন বাচ্চারা খুব কান্নাকাটি করছিল। তখন আমি মেয়েটির কাছে জানতে চাইলাম তোমাদেরকে কেন আলাদা করে রেখেছে? উত্তরে বাচ্চারা জানায়, আমার মা বলছিল “আমার খুব সন্দেহ সন্দেহ লাগে”। তখন আমি তাদের বললাম, তুমি তোমার মার কাছে যাবে না, তুমি কি ফোনের স্পিকার ফোন অন করতে পারবা? উত্তরে বলল, হ্যাঁ পারব। তখন আমি বললাম স্পিকার অন করো। বাচ্চারা মোবাইলের স্পিকার ফোন অন করার পর আমি উক্ত নারীর সাথে কথা বলি। তখন ওই নারীর কাছে জানতে চাইলাম, আপনি কই গেছিলেন গত কয়েকদিনের মধ্যে? উত্তরে ওই নারী জানায়, আমি কয়েকদিন আগে কাপাসিয়া বাজার থেকে বাজার করে আনছি। আমার তো কেউ নাই যাতে এক মাস বাচ্চাদের খাবারের কোন অসুবিধা না হয়।
সিমিন হোসেন রিমি আরো বলেন, তখন আমি বুঝলাম হয়তো বাজার থেকেই তার সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। তিনি কথা বলতে খুব অসুবিধা বোধ করছিলেন। তিনি শুধু চিৎকার করছিলেন, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। তিনি কাঁদছিলেন আর শুধু বলছিলেন আপা, আপা গো, আমাকে একটু অক্সিজেন দেন, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, আমার গলা চেপে আসতেছে। তখন আমি তাকে দ্রুত বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে বলি এবং বুকের নিচে একটি বালিশ চাপা দিতে বলি। এই অবস্থায় তাকে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে বলি। এভাবে কিছুক্ষণ নি:শ্বাস নেওয়ার পর সে জানায় যে, সে এখন কিছুটা সুস্থ বোধ করছে এবং নিঃশ্বাস নিতে পারছে। একইভাবে শুয়ে নি:শ্বাস নেয়ার ব্যায়াম করার কিছুক্ষণ পর সে জানায়, তার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। তখন আমি তাকে দ্রুত উঠে বসতে বলি এবং হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে বলি। এই অবস্থায় তাকে আরো অনেক জোরে নিঃশ্বাস নিতে বলি। এভাবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আমি তার সাথে ফোনে বিভিন্ন পরামর্শ দেই। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসও চালু রাখার চেষ্টা করি।
তিনি আরো বলেন, আমিি এ সময়ের মধ্যে অন্য একটি ফোনে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: খলিলুর রহমান এবং গাজীপুর সিভিল সার্জন ডা: খারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করি। আমি তাদের অনুরোধ করি দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য। অ্যাম্বুলেন্স কাপাসিয়ার শাফাইশ্রীতে উক্ত মহিলার বাড়িতে পৌঁছলে আমি হাসপাতাল থেকে পিপেই সংগ্রহের ব্যবস্থা করি এবং রাত পৌনে বারোটার দিকে তাকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে সেখানে ভর্তির ব্যবস্থা করি। বর্তমানে ওই নারী গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তিনি সুস্থ আছেন।
সিমিন হোসেন রিমি বলেন, সোমবার ঐ নারী এবং তার সন্তানদের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি তিনি ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবেন। আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ করে দেন।
এ বিষয়ে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: খলিলুর রহমান জানান, উক্ত নারীর প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ছিল। শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসার পর বর্তমানে তিনি অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত তার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসেনি।