কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো করোনা পজিটিভ ব্যাক্তিদের জন্য একটি বেসরকারী হাসপাতালে আইসোলেসন সেন্টার চালু করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি উপজেলায় করোনা পজিটিভ হওয়া সকলের চিকিৎসাসহ সার্বিক কাজ তদারক করছেন ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁরই নির্দেশনায় এই আইসোলেসন সেন্টার চালু কর হলো।
জানা যায়, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারি, সাংবাদিক মিলিয়ে করোনা পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা ৭০। সোমবার পর্যন্ত গাজীপুর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৯ জন। কাপাসিয়া উপজেলায় করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ৩০ জন, একটি মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানার ১৪ জন, জেলা সিভিল সার্জন অফিসের দুই কর্মচারী এবং বাকীরা বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
কিন্তু উপজেলায় চিকিৎসার জন্য কোন বিশেষাযিত হাসপাতাল বা আইসোলেসন সেন্টার নেই। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারিসহ মোট ৩০ জন করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা সীমিত করা হয়েছে। একারণে পজিটিভ ব্যাক্তিদের অধিকাংশ নিজ নিজ বাড়িতে হোম আইলোলেসনে রয়েছেন। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে নানাবিধ সামাজিক সংকট তৈরী হওয়ায় উপজেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালকে আইসোলেসন সেন্টার হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি জানান, কাপাসিয়ায় করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলার উপজেলা কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারিসহ ৩০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে নার্সিং ইনস্টিটিউটে আইসোলেসনে রাখা হয়েছে। দস্যু নারায়নপুর গ্রামের ছোঁয়া এগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার করোনা পজিটিভ শ্রমিকদের মধ্যে একজনকে ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকীদের ১৩ জন শ্রমিককে কারখানার ভিতরেই আলাদাভাবে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। সেখানে তাদের স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ চিকিৎসা ও অন্যান্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে। তাদের শারিরীর অবস্থা স্থিতিশীল আছে।
সিমিন হোসেন রিমি আরো জানান, হাসপাতাল ও কারখানার বাইরে উপজেলার আরো যে ২৬ জন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি রয়েছেন, তারা নিজ নিজ বাড়িতেই আইসোলেসনে রয়েছেন। কিন্তু করোনা পজিটিভ হওয়ার পর উক্ত ব্যক্তিদের প্রতিবেশীরা অনেক ক্ষেত্রেই অসহযোগিতা করছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পজিটিভ হওয়া ব্যক্তির পরিবারের লোকজনদের সাথে বিরোপ আচরণ করছে। এসব কারণে পজিটিভ ব্যক্তিরা নিজ নিজ বাড়িতে থাকার ক্ষেত্রে অনেকে অস্বস্তিবোধ করছেন। আশেপাশের লোকজনও ভীত ও আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে তাদেরকে বিকল্প ব্যবস্থায় আইসোলেশনে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালকে বেছে নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে বাড়িতে আইসোলেসনে থাকার বিষয়টি করোনা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর এই ঝুঁকি মোকাবেলার লক্ষ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমির পরামর্শে কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা পজিটিভদের আইসোলেশন রাখার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলায় বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত যে হাসপাতালটি করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের আইসোলেসনে রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বাছাই করেছে সিটি উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরগার বাজারের পাশে অবস্থিত। এর নাম মডিউল কমিউনিটি হাসপাতাল। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন। হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হল হাসপাতালটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিল।
এ বিষয়ে হাসপাতালের মালিক ডা: মো : রুহুল আমিন বলেন, হাসপাতালে পঞ্চাশটির মতো শয্যা রয়েছে। হাসপাতালটি এখনো উদ্বোধন করা হয়নি। তারপরেও দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমার হাসপাতালটি করোনা পজিটিভদের জন্য চিকিৎসা সেবার কাজে ব্যবহৃত হবে এটি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আমি একজন চিকিৎসক, আমার ছেলেও একজন চিকিৎসক। একজন চিকিৎসক হিসেবে সমাজের প্রতি আমারও দায়বদ্ধতা রয়েছে। স্থানীয় এমপি মহোদয়, উপজেলা প্রশাসন আমার হাসপাতালটি বেছে নেওয়ার জন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। হাসপাতালে যাদের আইসোলেশন রাখা হবে, আমি তাদের সকলের সুস্থতা কামনা করছি।
ইতিমধ্যে কাপাসিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ ইসমত আরা, কাপাসিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুর রহিমসহ সংশ্লিষ্টরা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, হাসপাতালটির সামগ্রিক প্রস্তুতি আজকের (সঙ্গলবার) মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমরা সরকারি অ্যাম্বুলেন্স যোগে বিকাল থেকে করোনা পজিটিভ হওয়া ব্যক্তিদেরকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে উক্ত আইসোলেশন কেন্দ্রে নিয়ে আসব। এখানে তাদের স্বাস্থ্যের পরবর্তী ধাপগুলো পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হবে। খাওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবার যদি সহযোগিতা করতে চায়-করবে, বাদবাকি ব্যবস্থাপনা স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়, উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বহন করবে।
এব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমি সব সময় কাপাসিয়া উপজেলার প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ সবার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। উপজেলায় করোনা পজিটিভ হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তিদের সাথে আমি যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। অনেকের সাথে আমার ব্যক্তিগত কথা হয়েছে। আমি সব সময় তাদের পাশে থেকে তাদের সুস্থতায় কাজ করে যাচ্ছি। তিনি পজিটিভ হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ না করার অনুরোধ করেন। উপজেলায় করোনা পজেটিভ ব্যক্তিদের সুরক্ষা, তাদের চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে হোম আইসোলেশন থেকে একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রাখার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি সকলকে বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য, করোনাকে নিয়ন্ত্রনের জন্য সকলকে ঘরে থাকা এবং নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ জানান।