গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় সন্তান জন্ম দিতে হাসপাতালে গিয়ে সন্তান জন্মদানের পর হাসপাতালের বিল পরিশোধ করার জন্য সেই নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক পোশাক শ্রমিক দম্পতি। বিল মিটিয়ে সন্তান ছাড়াই বাড়ি ফেরেন তারা।
এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা জানার পর গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) বিপিএম (বার) ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি ঘটনার সত্যতা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেই ক্রেতা (অপর এক নিঃসন্তান দম্পতি)কে টাকা পরিশোধ করে সেই সন্তানকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এসময় তিনি সন্তানকে লালন-পালনের জন্য নগদ আরো পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন ওই দম্পতির হাতে।
অসহায় এই তরুণ দম্পতি গাজীপুরের মহানগরের এনায়েতপুর এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় তারা দুই মাস ধরে বেতন না পেয়ে এমন কাজ করতে বাধ্য হয়েছে তারা।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার এসএম জিকরুল হাসান জিকু সেই খবর শুক্রবার ফেইসবুকে জানালে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।
ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, গর্ভবতী কেয়া খাতুন তার স্বামী মোঃ শরীফকে নিয়ে ২১ এপ্রিল গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে স্থানীয় সেন্ট্রাল মেডিকেল হাসপাতালে জরুরী অবস্থায় ভর্তি হন। সেই দিনই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কেয়া খাতুনের কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। চিকিৎসার প্রয়োজনে তারা ১১দিন হাসপাতালে থাকার পরে বিল আসে ৪৭ হাজার টাকা। কিন্তু দারিদ্রের নির্মম পরিহাসে কেয়া খাতুন ও তার স্বামী শরীফ হাসপাতালের বিল দিতে না পারেনি। তাই অন্যের কাছে নিজের সন্তান কে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। সেই সন্তান বিক্রির টাকা দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে মা তার নাড়িছেড়া ধনকে ছাড়াই ১লা মে তারিখে গাজীপুর মহানগরীল কাশিমপুর এলাকায় এনায়েতপুর নিজ বাড়ি চলে যান। পরবর্তীতে বিষয়টি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনারের নজরে আসলে তিনি নিজেই হাসপাতালের বিল পরিশোধের মাধ্যমে নবজাতক শিশুকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। একটি নবজাতক সন্তান খুজে পায় পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মায়ের কোলে তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়ে মানবতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন কমিশনার। মা যেন তার নিজের সন্তানকে কাছে পেয়ে তার মাতৃত্বের সাধকে পূরন করেছে। মা এবং ছেলে এখন সুস্থ আছে।
কোনাবাড়ি থানার ওসি মো. এমদাদ হোসেন বলেন, ১৮ বছর বয়সী ওই প্রসূতিকে গত ২১ এপ্রিল কোনাবাড়ি এলাকার বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করালে অস্ত্রোপচারে ওই দিনই তাদের ছেলের জন্ম হয়। সেখানে ১১ দিন থাকার পর তারা জানতে পারেন, হাসপাতালে তাদের ৪২ হাজার টাকা বিল হয়েছে। “কিন্তু দুই মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় তাদের হাতে টাকাও ছিল না। বিষয়টি জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু ছাড় দিলেও ১৯ হাজার টাকা দিতে বলে। তারা সেই টাকাও জোগাড় করতে পারেননি। “অনেক চেষ্টা করে তারা চার হাজার টাকা জোগাড় করেছিলেন, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাতে নারাজ ছিল। টাকা জোগাড় করতে না পেরে তারা নবজাতককে কাশিমপুরের রওশন মার্কেট এলাকার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।” তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের বিল মেটাতে বাচ্চা বিক্রির করে দেওয়ার খবর পেয়ে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন শুক্রবার দুপুরে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনেন, তুলে দেন মায়ের কোলে।”
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, “আগে খবর পেলে শিশুটিকে বিক্রি করতে হত না। হাসপাতালের বিল আমি পরিশোধ করে দিতাম। ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। পরে দত্তক নেওয়া দম্পতিকে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে নবজাতকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শিশুটির লালন-পালনের জন্য তাদের আরও পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।” আমি এডিশনাল আইজি (এসবি) স্যারের মাধ্যমে ঘটনাটি শোনার পর খুব খারাপ লেগেছিল। সন্তানটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে।’