গণবাণী ডট কম:
সরকারের হেল্প লাইনে ফোন করে খাদ্য সাহায্য প্রার্থী কর্মহীন, অসহায় ও হতদরিদ্র সাড়ে ১১ হাজার পরিবারের ঘরে ঘরে রাতের আঁধারে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছেনে গাজীপুর জেলা প্রশাসক।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে লকডাউনের ঘোষণা মেনে ঘরে অবস্থান নেওয়ায় এসব দরিদ্র পরিবার কর্মহীন ও অসহায় হয়ে খাদ্য সংকটে পড়ে। সরকারি খাদ্য সহায়তার বাইরে খাদ্য সংকটে থাকা এসব মানুষের তথ্য ফোন কলে জানার পরই রাতে গাড়ীতে করে সাহায্য প্রার্থীদের বাড়ী বাড়ী খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের হেল্প লাইন ৩৩৩ এবং জেলা প্রশাসনের হট লাইনে ফোন করে যারা খাদ্য সহায়তার আবেদন করেছেন, তাদেরকেই এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত সাড়ে ১১ হাজার প্রার্থীকে এ সহায়তা দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গৃহীত কর্মসূচী বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র অসহায় ও কর্মহীণ হয়ে ঘরে থাকা মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে সরকার। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তালিকা করে গাজীপুর জেলায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এসব খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের ত্রাণ শাখা থেকে সরকারের বরাদ্ধকৃত এসব খাদ্য সামগ্রী সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ বিতরণ করছে। এছাড়াও সরকারের খাদ্য বান্ধব ভিজিডি, ভিজিএফ, ১০ কেজি চাউলসহ নানা কর্মসুচী থেকে মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত আছে। এসব কর্মসূচীর বাইরে অনেক মানুষ সরকারের হেল্প লাইন ৩৩৩’তে ফোন করে খাদ্য সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। এসব তথ্য গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে আসলে তিনি সরকারে বর্ণিত খাদ্য সহায়তার বাইরে থাকা, যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, এমন ব্যক্তি বা পরিবারকে প্রতিদিন খাদ্য সহায়তা তাদের ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছেন। প্রতিদিনই তিনি অসহায়দের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, ৩৩৩ সহ বিভিন্ন হেল্প লাইনে ফোন করে যারা খাদ্য সমস্যার কথা জানাচ্ছেন, আমরা তাদের সমস্যার কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ীতে করে সংশ্লিষ্টদের বাড়ীতে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, একজন মানুষও যাতে খাদ্যের অভাবে কষ্ট না পায়। সেজন্য আমরা মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিয়েছি। এগুলো সরকারি ত্রাণ/খাদ্য সহায়তার বাইরে। প্রতিদিনই তালিকা ও খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট প্রস্তুত হচ্ছে, পরে গাড়ী করে এগুলো নির্ধারিত ব্যাক্তিদের বাড়ীতে পৌছে দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা জেলা প্রশাসন থেকে সরকারের বরাদ্দ করা খাদ্য সহায়তা সামগ্রী জেলার বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অনুকলে বরাদ্দ দিয়েছি। তারা সেগুলো অসহায়, দরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে খাদ্য সংকটে থাকা মানুষকে প্রদান করছেন। যারা কোন কারণে এর বাইরেও থেকে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে যাদের খবর পাচ্ছি আমরা তাদের সহায়তা দিচ্ছি। বাড়ী বাড়ী ত্রাণ পৌছে দেয়ার কাজে সহায়তা করছেন গাজীপুর রেড ক্রিসেন্ট ও গাজীপুর ট্রেন প্যাসেঞ্জার ফোরামের ৫০ জনের মত স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া সমাজের কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মানুষকে সহায়তা করার জন্য জেলা প্রশাসনকে খাদ্য সামগ্রীর এসব প্যাকেট সহায়তা দিচ্ছেন। আমরা চাহিদা অনুযায়ী এগুলো মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছি। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট স্বেচ্চাসেবকগণ যারা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিকে প্রশাসনকে সহায়তা করছে তাদের ধন্যবাদ জানান। এসময় তিনি বিবিবিএল, আবুল খায়ের গ্রুপ, নেসলে, ফকির গ্রুপসহ সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ যারা মানুষের এ দুঃসময়ে খাদ্য সামগ্রী সহায়তা হিসাবে প্রদান করে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, জেলা প্রশাসক তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, সোমবার পর্যন্ত ২ হাজার ৯১৪ মেট্রিক টন সরকারি চাল বরাদ্ধ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২ হাজার ৬১৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ সহায়তার মধ্যে ১ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। জেলায় শিশু খাদ্যের জন্য সহায়তা আসে ২৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, করোনা সংক্রমনের পর থেকে সোমবার পর্যন্ত গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ ২৮৪টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৬০৬টি মামলা দায়ের করেছেন। অর্থদন্ড করা হয়েছে ৫৮৪জনকে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে ৩৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫০ টাকা।