গণবাণী ডট কম:
৩২ বছর আগে করা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পাদিত দ্যা ইন্টার্মেডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সের ট্রিটি বা আইএনএফ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ভেঙে গেছে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ও সোভিয়েত প্রধান মিকাইল গর্বাচেভের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমে সরে গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই এ চুক্তি থেকে সরে যাবার ঘোষণা দিল রাশিয়া। এ চুক্তি বাতিল হয়ে যাবার ফলে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতার শঙ্কা তৈরী হয়েছে। খবর: বিবিসি ও অন্যান্য সূত্রের।
দ্যা ইন্টার্মেডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সের ট্রিটি বা আইএনএফ চুক্তি অনুযায়ী ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে থাকা লক্ষ্যকে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রকে বাতিল করে দেওয়া হয়।
পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়াও জানিয়েছে, তারাও আর থাকছে না সেই চুক্তিতে। ফলে বিশ্বজুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এই চুক্তির প্রেক্ষিতে ৫০০ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাল্লার মধ্যে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে নিষিদ্ধ করেছিল আমেরিকা ও রাশিয়া। চুক্তির কারণে ১৯৯১ সালে প্রায় দুই হাজার ৭০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছিল আমেরিকা ও রাশিয়া।
কিন্তু চলতি বছরের শুরুর দিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। তবে তা অস্বীকার করে রাশিয়া। মার্কিনিরা জানায়, সম্প্রতি রাশিয়া এই ধরনের ৯এম৭২৯ মডেলের কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে যা ন্যাটোর কাছে এসএসসি-৮ নামে পরিচিত। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারেীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া যদি চুক্তিটা মেনে চলতে না চায়, তা হলে যুক্তরাষ্ট্রও বেরিয়ে আসবে চুক্তি থেকে। আর তার জন্য তিনি ২ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। কিন্তু ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে রাশিয়া কোনো পাত্তাই দেয়নি।
এ বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও বলেন, ‘এই চুক্তি বাতিলের জন্য একমাত্র রাশিয়া দায়ী। ন্যাটোর সাহায্যে আমরা রাশিয়ার চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি এবং আমরা এই চুক্তির অধীনে আমাদের সকল দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছি।’
পাল্টা রুশ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ পাভেল ফেলগেনহাওয়ার বলেছেন, ‘চুক্তিটা আর থাকল না। এখন আমরা নতুন নতুন অস্ত্রের নির্মাণ দেখব। আমরা দেখব সেই সব অস্ত্র বসানো হচ্ছে একে অন্যকে তাক করে। আর রাশিয়া এখনই তার জন্য তৈরি আছে।’
ঐতিহাসিক ওই চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ন্যাটো জোটের মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, রাশিয়া যে ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে সেগুলি পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে। খুবই দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। সেগুলি কয়েক মিনিটের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিতে পারে ইউরোপের শহরগুলিকে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণার পর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে ছেদ পড়েছিল, চুক্তি ভঙ্গের মাধ্যমে তা আবার শুরু হতে চলেছে। এর ফলে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মহরা হবে। এসব সব অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি বেড়ে যাবে।’ বিষয়টি নিয়ে দু’দেশকে নতুন করে আবারো আলোচনায় বসতে অনুরোধ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।