গণবাণী ডট কম:
সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলের তার তান্ডব শেষ করে স্থল বিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। রাতভর তা লণ্ডভণ্ড করেছে বিস্তীর্ণ এলাকা, জলোচ্ছ্বাস ও বাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে দেশের দক্ষিণের নিন্মাঞ্চল। প্রলয়ঙ্করী এই ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে যশোরে দুইজন, পটুয়াখালীতে দুইজন, ভোলায় একজন, পিরোজপুরে একজন, ঝিনাইদহে একজন ও সাতক্ষীরায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
যশোরের চৌগাছায় গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরায় আম গাছের ডাল ভেঙে কহিনুর বেগম (৪০) নামে একজন মারা গেছেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার কামার নগর গ্রামে বাড়ি।
অন্যদিকে, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় জন-সচেতনতার প্রচার কাজ চালাতে গিয়ে ধানখালীর ছৈলাবুনিয়া এলাকায় খালে নৌকা ডুবে সিপিপি’র দলনেতা শাহ আলম নিখোঁজ হন। পরে ডুবুরি দল তার লাশ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও কলাপাড়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
গলাচিপা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে এর নিচে চাপা পড়ে রাসেদ নামে ৬ বছরের একটি শিশু। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণে গাছ চাপা পড়ে ছিদ্দিক ফকির (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, ওই বৃদ্ধ বয়স্ক ভাতা আনার জন্য ভাড়া করা মোটরসাইকেলে উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঝড়ে একটি গাছ ভেঙে তার ওপর পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সাতক্ষীরা শহরের সংগীতা মোড় এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই মধ্য বয়সী নারী শহরের কামালনগর এলাকার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়াল চাপা পড়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার নাম শাহজাহান মোল্লা (৬০)। রাত সাড়ে আটটায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মঠবাড়িয়া থানার ওসি মাসুদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি গিলাবাদ।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় হলিধানী গ্রামে ঘরের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে নাদিরা বেগম নামে একজন মারা গেছে বলে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ গণমাধ্যমকে জানান।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আম্ফানের তীব্রতা অনেকটাই কমে এসেছে। এখন তা স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থান করছে। এর আগে, রাতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সাতক্ষীরার খুব কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করেছে। সাতক্ষীরা শহরে রাত বাড়ার সাথে সাথে ঝড়ের গতিবেগও কমতে থাকে। যদিও বিকেল থেকেই আম্ফানের ঝড়ো বাতাস সাতক্ষীরা-সুন্দরবন এলাকায় প্রবেশ করে।
এদিকে আম্ফানের প্রভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন তথ্য জানান।