বাংলাদেশে এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হিসেবেই আরও ২৩৪৮ জন লোক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, যদিও এটি মাত্র ৪০টি হাসপাতাল থেকে নেয়া তথ্য।
এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসেবেই এখন প্রায় ত্রিশ হাজার। আর এ পর্যন্ত মোট ২৩ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে অধিদফতর যদিও বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা একশর কাছাকাছি আর আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসেবে কয়েকগুণ বেশি। খবর : বিবিসি।
ঢাকার শ্যামলী এলাকায় বসবাস করেন নুসরাত জাহান। তার মতে শুরু থেকে কর্তৃপক্ষের দায়সারা আচরণের কারণেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি এ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।
তিনি বলেন, “এগুলো তো আসলে একদিনের ফল না। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বের অবহেলার বিষয়টি আমি বলতে চাই। মশার উৎসস্থল ধ্বংসের চেষ্টা আমার চোখে পড়েনি”।
ঢাকায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেশি।
ডেঙ্গু নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের এমন সমালোচনায় মুখর অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কিংবা ব্যঙ্গও করছেন অনেকে।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা জেনিফার রহমান বলছেন, একদিকে মশা আরেকদিকে চিকিৎসার অপ্রতুলতার খবরে এখন রীতিমত বিচলিত তারা।
তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা মূহুর্তে আতংকিত থাকতে হয়, কখন মশা কামড়ায়। আবার আক্রান্ত হলে হাসপাতালে গেলে সময়মতো চিকিৎসা পাবো কি-না। কারণ অনেকে হাসপাতালেই তো এখন বলে দিচ্ছে যে সিট নেই”।
নাগরিকদের এমন ভয় আর আতঙ্কের মধ্যেই আজও ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত কয়েকদিনে বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতাও নেয়ার চেষ্টা হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে।
ঢাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি ড: বর্ধন জং রানা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সংস্থার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ পেয়েছে কয়েকটি বিষয়ে। একটি হলো টেকনিক্যাল সাপোর্ট, যেটি আমরা ইতোমধ্যেও দিতে শুরু করেছি। একজন বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যেই ঢাকায় এসে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলেছেন। র্যা পিড টেস্টের সরবরাহেরও একটি অনুরোধ করা হয়েছে। এক লাখ টেস্ট কিটের অনুরোধ করা হয়েছে। এর প্রক্রিয়া চলছে”।
কিন্তু বাংলাদেশে যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে - তখন খবর এসেছে ফিলিপিনের কর্তৃপক্ষ ছ’শোর বেশি মানুষের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে সেখানে ডেঙ্গুকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে আজই।
সিটি কর্পোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম।
কিন্তু বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি সেটি কি মহামারি পর্যায়ে এসেছে? জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশে আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা বলেন, বাংলাদেশ একটি রোগপ্রবণ দেশ। এখানে মশা ও রোগ আছে বছর জুড়েই।
“হ্যাঁ, এবার বিপুল সংখ্যক ঘটনার খবর আসছে। এবার ঢাকার বাইরে থেকেও এটা হচ্ছে। যে কারণে আক্রান্তের সংখ্যা এতো বেশি। মশার সংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধিও এর বড় কারণ। সরকার বিষয়টি নিয়ে সচেতন। আমরাও সহায়তা করছি। সবাই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছে।” কিন্তু কবে নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সবাই যত দ্রুত এগিয়ে আসবে তত দ্রুতই অবস্থার উন্নতি হবে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশন আরও বিশেষজ্ঞদের সাথে বৈঠক করছে। এতে করে কি সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে এতদিন যা করছিলো তাতে কোনো পরিবর্তন এসেছে বা আসছে? জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, “উনারা জনসচেতনতা ও এডিস মশার প্রজনন স্থল নিয়ে বলেছেন। এটি আমরা শুরু থেকেই করছি। নির্মাণাধীন, বাস টার্মিনাল, টায়ার, হাসপাতাল এসব জায়গায় লার্ভা হয়।
আমরা মোবাইল কোর্ট চালু করেছি। তারা এসব জায়গায় যাচ্ছে ও জরিমানা করছে”।
তবে সিটি কর্পোরেশনের কৌশলে কোনো পরিবর্তন না আসলেও হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে রোগীদের জায়গা দিতে। এমন পরিস্থিতি স্বাস্থ্য অধিদফতর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন পঞ্চাশটি আইসিও বেড সংযোজনের খবর দিয়েছে।
সামনে ঈদের ছুটি সরকারি বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতালকে হেল্প ডেস্ক চালুর পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে সার্বক্ষণিক সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে।