গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাপসপাতালে চিকিৎসক ও শয্যা না পেয়ে বাড়ী ফিরে বিনা চিকিৎসায় এক ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নাল্লিাহি — রাজেউন)।
হতভাগ্য ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র নাম ফজলুল হক ফকির (৮৫)। তিনি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার খোদাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার ) বেলা সোয়া ১২টার দিকে গুরুতর অসুস্থ এই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ কে চিকিৎসার জন্য তার স্বজনরা ওই হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে কোন চিকিৎসক ছিলেন না। পরে তাকে হাসপাতালের কেবিনে বেড দিতে বললে জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয় হাসপাতালের কোনো বেড খালি নেই। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলে তাকে নার্সরা মেঝেতে শয্যা পেতে দেন। স্ট্রোকের রোগী নিয়ে সেখানে অবস্থান করার মতো পরিবেশ ও হাসপাতালে চিকিৎসক উপস্থিত না থাকায় সেখান থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ী নিয়ে আসে স্বজনরা।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার ইটালী প্রবাসী ছেলে হারুন ফকির গত ১৬ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে মর্মস্পর্শী একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে তিনি বলেন, আমার আব্বা একজন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে গেছে কালকে গিয়ে ছিল গাজীপুর সদর হসপিটালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য কিন্তু 16 এ ডিসেম্বর বলে কোন ডাক্তার হসপিটালে নাই আর আমরা 16 ই ডিসেম্বর বলে চিল্লা-চিল্লি করি 26 শে মার্চ বলে চিল্লা-চিল্লি করি কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য ডাক্তার পাওয়া যায় না আমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে গত বুধবার রাতে হারুন ফকিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উল্লেখিত ঘটনা জানান। এসময় তিনি আরো কোন তথ্য জানার জন্য দেশে তার ছোট ভাই মামুন ফকিরের ফোন নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে মামুন ফকিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আজ সকাল ১০টায় তাদের পিতা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ নিজ বাড়ীতে মারা গেছেন। তাজউদ্দীন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে আমরা আব্বাকে বাড়ীতে নিয়ে আসি। পরে বিজয় দিবসের ছুটি থাকায় অন্য কোথাও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। আজ পপুলারর হাসপাতালে নেয়ার কথা ছিল। তার আগেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
এসম তিনি আরো জানান, তার বাবা একজন স্ট্রোকের রোগী ছিলেন। কাপাসিয়া থেকে তার বাবাকে নিয়ে রওনা হয়ে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওই হাসপাতালে পৌঁছান। কিন্তু এসময় তাকে চিকিৎসা দেয়ার মতো চিকিৎসক ছিলেন না। পরে তাকে সেখানকার কেবিনে বেড দিতে বললে জরুরী বিভাগ থেকে জানানো হয় হাসপাতালের কোন বেড খালি নেই। পরে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলে তাকে নার্সরা ফ্লোরে শয্যা পেতে দেন। স্ট্রোকের রোগী নিয়ে সেখানে অবস্থান করার মতো পরিবেশ ও হাসপাতালে চিকিৎসক উপস্থিত না থাকায় সেখান থেকে বাবাকে নিয়ে বাড়ী চলে আসি। চলে আসার আগে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় বিজয় দিবসের দিনও তাকে চিকিৎসা দেয়ার মতো বড় ডাক্তার হাসপাতোলে থাকবে না।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাপসপাতালে উপ-পরিচালক তপন কান্তি সরকার সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তার নলেজে নেই। তবে জরুরী বিভাগ কখনও ডাক্তার ছাড়া থাকে না। হয়তো ওই মুক্তিযোদ্ধা যখন গেছেন তখন জরুরী কোন কাজে হাসপাতালের অন্যত্র ছিলেন। একজন মাত্র আছেন নিউরো সার্জন। বুধবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে থাকায় হয়তো হাসপাতালের ডিউটিতে যাননি।