সঙ্কট মূলনীতি, I DON’T KNOW সংস্কৃতি
রাজীব কুমার দাশ :
ইংরেজী না জানা পাশপাশি প্রেম নগর ও ছ্যাঁকা নগর দু’টি গ্রামে প্রায়ই ঝগড়াফসাদ লেগে থাকত।সময়ের হাত ঘুরে ইংরেজ সাহেবের হাত ধরে দাগ মৌজা খতিয়ান ম্যাপ যেদিন হতে দু’টি গ্রামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সময়খেকো কালের সাক্ষী বটগাছ’টি দাসখত না দিয়ে দেখে এসেছে; সেদিন হতে এ শতবর্ষী হাজার বছরের কালের সাক্ষী হয়ে পরিসর জুড়ে জমি’তে সামন্ত শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে বিস্তারবাদীদের আচরণ নিয়ে দু’গ্রামের অপলক দৃষ্টির কৃষ্টি হয়ে গাছটি এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। গ্রাম দুটি’তে বিয়ে-শাদী উৎসব প্রতিযোগিতা, বিরোধ মীমাংসা এমন কী! সৌখিন ইংরেজ সাহেবের তাঁবু টাঙিয়ে বিশ্রামের সাক্ষী এ বটগাছ।
গ্রামের যারা এক আধটু ভাঙা গলা নিয়ে ভুল শুদ্ধ ইংরেজী জানেন,তাদের কদর অন্যদের হতে বেশ বেশি। অবশ্য সময়ের কলেবর নিয়ে ছ্যাঁকা নগর সামলিয়ে সামনে পেছনে ছ্যাঁকা দিতে প্রেমনগর’কে বেশি বেগ পেতে হয়নি। কারণ ইংরেজ লাট সাহেবের ফরমাশ খাটা ডিসকো দাদুর পরামর্শে রেঙ্গুন শহরে দাদুর পরিচিত বিশুদ্ধ ইংরেজী জানা শিক্ষক প্রেমরাজ’কে লোভনীয় মাইনে দিয়ে প্রেমপুরে নিয়ে আসা হয়েছে।
ইংরেজ শিক্ষক প্রেমরাজ এসে দেখেন, এ গ্রামের একমাত্র বয়স্ক ডিসকো দাদু ছাড়া কেউ ইংরেজী জানা দূরে থাক! বর্ণমালা পর্যন্ত জানেন না। রাতারাতি গ্রামের লোকজন স্কুল নির্মাণ করে দিলেন। সন্ধ্যার পরে ডিসকো দাদু’র রেঙ্গুন শহর হতে আনা বড় বড় হেজাক লাইটের আলোতে এ-বি-সি-ডি পড়ার চিৎকার শুনে ছ্যাঁকাপুরের লোকজন প্রেমিকার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে প্রেমিকের বরযাত্রার করুণ পরিণতি চিন্তা করে সারারাত কেউই ঘুমোতে পারেন নি। সকালে অম্ল ঢেঁকুর নিয়ে গ্রামের কর্তা পরানের শরণাপন্ন হলেন। মানিক নগরের সবাই নিরক্ষর! বাম-ডান যুতসই টিপসই যেখানে সবার ভরসা এ-বি-সি-ডি ইংরেজি বর্ণমালা অক্ষরজ্ঞান সেখানে তো স্বপ্ন। কিন্তু নাহ্ ছ্যাঁকা গ্রামের লোকজন দূর্যোধনের মতো বিনাযুদ্ধে সূঁচের অগ্রভাগ পরিমাণ সন্মান ছাড় দিতে রাজী হলেন না। যে কোনো প্রকারে-উপায়ে তাদের মানিক নগর গ্রামে কাঞ্চন নগর অপেক্ষা সেরা ইংরেজী শিক্ষক চাই-ই । দিকে দিকে সবদিকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে জানানো হয়ে গেছে।
এদিকে ডিসকো দাদুর পরামর্শে ইংরেজী শিক্ষক প্রেমরাজ’কে গ্রামের সবাই হারাতে চান না। যে কোনো মূল্যে প্রেমরাজ’কে আটকাতে হবেই। যেমন ভাবা তেমন কাজ! শিক্ষক প্রেমরাজের নামে কাঞ্চন নগর নামটি পাল্টে হয়ে গেলো প্রেমনগর । শিক্ষক প্রেমরাজ কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাযাবজ্জীবন থাকার দন্ড মেনে বেশ আমুদে বদনে ক্ষীর ননীছানা ভোজন করতে লাগলেন।
বিধবার সর্বনাশ করে গ্রাম পালানো যুবক ডালিমের শিক্ষাগত যোগ্যতা ক্লাস এইট। অষ্টম শ্রেণী পাশ করে ইঁচড়ে পাকা ডালিম পড়ার পাঠ চুকিয়েছে অনেক আগেই। বাবা’র ঠিকুজি ব্যবসা,হতাশা ভোগা মানুষের কৌশলে পরখ করে গোমেদ- মুক্তা-হীরা-পান্না পাথর ব্যবসা করে দেশি কেরু কোম্পানীর মদে মাতোয়ারা হয়ে সধবা- বিধবা কুমারী নিয়ে বেশ আনন্দ সময় পার করছে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক বিধবার সর্বনাশ ঘটিয়ে সে এখন লাপাত্তা। মানিকনগর গ্রামের ঢাক-ঢোল পেটানোর শব্দ যে কোনো ভাবে ডালিমের কানে পৌঁছে গেছে। পৌষ মাঘের শীতে কৈবর্ত পল্লীতে লুকিয়ে সাগরে মাছ ধরা,চোলাই মদ, গায়ে আঁষটে গন্ধে ডালিম দিশেহারা। পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মানিকনগর গ্রামের সে এখন ইংরেজী শিক্ষক। গ্রামের সবার কাছে মূর্তিমান স্বর্গের বিদ্বান দেবতা। একদিন গ্রামবাসী’কে নিয়ে বৈঠকে বলেন ‘ গ্রামের সবার ভাগ্য আমি একাই পাল্টে দেবো। ‘সবার প্রশ্ন-কী প্রকারে? কাঞ্চন নগর গ্রামের মতো আমাদের মানিক নগর গ্রামের নাম পাল্টে দিতে হবে। ওদের গ্রামের নাম পাল্টে হয়েছে “প্রেমনগর”। টেক্কা দিয়ে কাবু করতে আমাদের গ্রামের নতুন নাম হবে “ছ্যাঁকানগর।” ইংলিশ টিচার ডালিম আরো বলেন,ছ্যাঁকা নগর নামে কোনো গ্রাম নেই, আকর্ষণ হবে বেশি। এ ছাড়া প্রেম নগরে আগামী প্রজন্মের সবাই প্রেম করবে ঠিকই ; কিন্তু প্রেমের বৃহৎ একটি অংশ কষ্মিনকালে ও প্রেমের পূর্ণতা পাবেনা! ছ্যাঁকা সাহিত্য পড়ার হাতেখড়ি নিতে অবশ্যই আমাদের ছ্যাঁকা নগরে আসতেই হবে। আস্তে আস্তে ছ্যাঁকা নগরের নামডাক সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। ছ্যাঁকা সাহিত্যে ডিগ্রিধারী পড়ুয়াদের ইংরেজ সাহেব-মেমসাহেব সাক্ষাৎকার নিয়ে সময় কাটাতে আমাদের গাঁয়ে আসবেন, এমন কী ‘ছ্যাঁকা কবি পরিষদ’ ব্যানারে বিলাত ভ্রমণ সুযোগ, জ্যোৎস্না রাতে ছ্যাঁকা প্রেম কবিতা পাঠের আসর তো থাকছেই। কবিতা শুনে হঠাৎ চাঁদের মকমল কিরণে কারো’র বুকে দাউ-দাউ করে ধোঁকা-ছ্যাঁকা প্রেমের আগুন নেভানোর ব্যবস্হা হিশেবে থাকছে একঝাঁক শিক্ষানবিশ ছ্যাঁকা তরুন-তরুণী সমন্বয় সাত্বনা স্বালোক;আবেগের দাবানল কান্না ঠেকিয়ে রাখতে সবশেষে থাকছে সীমিত পরিসরে গাঁজা চোলাই মদ সেবন। গ্রামের সবার সমস্মরে মানিকনগর নাম পাল্টে হয়েছে “ছ্যাঁকানগর।”
ছ্যাঁকানগরের নিয়ন্ত্রণ এখন ডালিমের হাতে। গুনে গুনে দশ অজাচার সম্পর্ক ছাড়া ও ডালিম মাষ্টার আবেগতাড়িত একাধিক সম্পর্ক নিয়ে গ্রামছাড়া হয়েছে প্রায় বছর পাঁচেক আগে। পাঁচফোড়ন জীবনে আর পেছনে তাকাতে চান না। সামনে এগিয়ে যাবার মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করতে অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর ডালিম মাষ্টার রাজী নয়। জীবনের সব সুখ ভোগের এইতো সুযোগ। কিন্তু মনের নিরঙ্কুশ অধিকার একাকী ভোগ করা চাই-ই। ভোগের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কী যেনো নাম! প্রেমনগর গ্রামের ইংরেজি মাষ্টার প্রেমরাজ ওরে বাবা,,,! কাছে যেতে ভয় হয়, ইংরেজ সাহেবের বাচ্চাদের পড়িয়েছে। যা করতে হবে তাড়াতাড়ি! ইংরেজি না বোঝার আগেই ছ্যাঁকা নগর-প্রেমনগর এক করে একাই ক্ষীর ননীছানা ভোজন করতে হবে। এক জঙ্গলে অসংখ্য বাঘিনী নিয়ে আমি একাই থাকবো। আস্তে -আস্তে ঘি ননীছানা, কচি পাঁঠার মাংস খেয়ে দু’গ্রামের সব গর্দভের মাথা মোটা করে দেবো। খালি পেটে বিষাক্ত চোলাইমদ খাইয়ে সুইপার কলোনি,কয়লা কলোনি,চা বাগানের কলোনি করে দাসখত করে নেবো। সব গর্দভের সুন্দরী বউ,রূপসী কন্যা আমার সেবা করবে। ওদের গর্ভে বেড়ে উঠবে আমার উত্তরসূরি প্রজন্ম। আমি হবো সবার”দেবদাস’ সবাই হবে আমার সেবাদাস-যৌনদাসী,,,,,!আমি হবো সর্বগ্রাসী। চোলাই মদ শেষ! একফোঁটা ও অবশিষ্ট নেই। ডালিম মাষ্টার মদ খায় ঠিকই! কিন্তু মদ কোনোদিনই ওকে খেতে পারেনি। “তাইতো ঢকঢক করে যখন মদ্যপান করেন মদ্য কাঁদিতে- কাঁদিতে প্রাণ ত্যাগ করেন।”
শীতের রাত। ভোর হতে এখনো কিছু সময় বাকি। চোখ দু’টি তামাটে লাল,হায়েনা চোখ হতে অনেক বাকি! না ঘুমিয়ে কুয়াশা ভেজা সকালে তাড়াহুড়ো করে গ্রামে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করেন। ডালিম সারারাত মদপান করে ও স্বাভাবিক। ঠিক লোভী তান্ত্রিকের ভয়ঙ্কর কর্ণপিশাচ সাধকের মতো। গ্রামের সবাই শতায়ু-গতায়ু আবাল বসে আছে। হঠাৎ হুংকার চিৎকার!ডালিম মাষ্টার বলেন,’আমি সরাসরি বিলাতের ছাত্র! আর প্রেম নগরের মাষ্টার টেনে-টুনে ইংরেজি পাশ করেছে।’ও ব্যাটা কী জানে?আমি ও ব্যাটা চোরের সাথে লড়তে চাই। যথারীতি প্রেমনগরের ডিসকো দাদু’কে খবর পাঠানো হয়েছে। দু’গ্রামের সীমান্তে থাকা বটগাছের নীচে আগামি শনিবার বিকাল তিনটে’র সময় প্রেমনগর বনাম ছ্যাঁকানগর ইংলিশ মাষ্টারের মূল্যায়ন প্রতিযোগিতা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়ী মাষ্টার দুটো গ্রামে ইংরেজি শেখাবেন, বিজিত মাষ্টার গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। সভায় একজন ইংরেজ বড়লাট সাহেব উপস্হিত থাকবেন। কী এক অবাক করা কান্ড! প্রেম নগরের ডিসকো দাদু ও ইংরেজি সাহিত্যে স্বর্ণপদক হাতিয়ে নেয়া শিক্ষক প্রেমরাজের অট্টহাসি মুচকি হাসিতে সব-ই একাকার। প্রেমরাজের নির্ভুল গ্রামার যে কোনো ছাত্র একনাগাড়ে ছয়মাস পড়তে পারলে ইংরেজি সাহিত্যে দখল আসতে বাধ্য ।
মদ- সুরা জীবনে কোনোদিনই ষ্পর্শ করেন নি। ধার্মিক ও নীতিবান! নারীপ্রীতি শূণ্য কোটায়, নিতান্তই ভদ্রলোক।
যথা তারিখে শত-হাজারবর্ষী বটগাছের নীচে প্রেমনগর -ছ্যাঁকা নগর গ্রামের বাসিন্দা ঢাক-ঢোল বাঁশি নিয়ে হাজির। গ্রাম দুটি’র মাঝখানে মঞ্চ,মঞ্চে বসা লাট বাহাদুর সাথে মেমসাহেব। এদিকে একসপ্তাহ সময় নিয়ে ডালিম মাষ্টার ছ্যাঁকা নগর বাসিন্দাদের কয়েকঘন্টা করে কয়েকভাগে ট্রেনিং করালেন। প্রথম দলে সুদর্শন নারী-পুরুষ! সবার হাতে বাহারি ফুলের মালা,ফুলের পাঁপড়ি, ব্যান্ড পার্টি, নানা পদ বাহারি খাবার,বিলাতের সুরা,পালকি,হাতি, দুষ্ট মিষ্টি চোখের পরমা সুন্দরী নারী। এ দলের নেতৃত্বে স্বয়ং মাষ্টার ডালিম। দ্বিতীয় দলে অসুরের শক্তি সম্পন্ন মদ্যপ সিংহভাগই যুবক। ওদের হাতে দেয়া হয়েছে একটি করে লাঠির অগ্রভাগে বৃটিশ পতাকা। কপালে বৃটিশ লাল পট্টি। ওদের কাজ হবে প্রেমনগরের যুবক-যুবতী, আবাল পেটানো, যদি ফলাফল মেনে না নেয়! তৃতীয় স্তরে নারী শিশু বৃদ্ধারা।
মঞ্চে প্রথমে বিলাতে পড়ুয়া মাষ্টার প্রেমরাজ ডিসকো দাদু’কে নিয়ে বিচারক লাট সাহেব,মেমসাহেবের সাথে নিরামিষ মার্কা কুশল বিনিময় করে পাশের চেয়ারে আসন নিলেন। ডিসকো দাদুর চিন্তা সারাজীবন রেঙ্গুনে(বর্তমানে মায়ানমার) ইংরেজ সাহেবদের নাইট ক্লাবে হাতের সব যশ দিয়ে সারাজীবনের জন্যে অসাধ্যকে সাধন-অবাধ্যকে বাঁধন ভাবনায় বশ করেছি। সব সাহেব আমার মামাতো -ফুফাতো ভাই তালতো ভাই। এবার ডালিম মাষ্টারের ট্রেনিং শুরু। প্রথম স্তরের বাদক দল বৃটিশ জাতীয় সংগীত,মদান্ধ দলের পতাকা প্রদর্শন, পরমা সুন্দরীর হাতের স্পর্শে সুগন্ধি ঘ্রাণে লাট সাহেব দিশেহারা!ভাবছে একি দেখছি! যেখানে বিপ্লবী স্বদেশী ভয়ে তটস্থ ;সেখানে মনে হচ্ছে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী অভ্যর্থনা আয়োজন। নীচে দু্ষ্ট সুন্দরীর হাতে সুরা,মকমল কাগড়ে মোড়ানো গোপন কক্ষ দেখে পারেন না,পাতলা পায়খানার দোহাই দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে সাজিয়ে রাখা হেরেমখানায় পালিয়ে যেতে। আহা!কী সুন্দর দুষ্টের দল। একেবারে বুনো মাদি ঘুঘুর দল। লাট সাহেবের এমন অবস্হা দেখে পাশে বসা মেমসাহেব ধমকে বলেন”দুশ্চরিত্র কোথাকার! সব জায়গায় তোমাদের এ অবস্হা। ” ডালিম মাষ্টার বলেন ‘হে আমার প্রভু! আমি আপনার ক্রীতদাস! এ হাতি ঘোড়া, সব সুন্দরী আপনার। দোভাষীকে আগেই বশ করা হয়েছে। লাট সাহেব বলেন,ডালিম আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি কিন্তু আমার মন বোঝে এমন একটি লোক আমি দেখিনি। বলো তুমি কী চাও?হুজুর আপাতত কিছু চাই না,এ বিপদ হতে উদ্ধার করুন। সাহেব মুচকি হেসে বলেন তুমি ইংরেজ বাহিনীর গর্ব, তোমার মতো একজন লোক হলেই,,,,, টিপু,সিরাজউদ্দৌলা, ঝাঁসির রানী সবাই দাসখত দলিলে অচিরে বন্দী হবে। তুমি জমিদারী প্রজাস্বত্ব লাট সাহেব - আমার চাকর হয়ে শাসন করবে ভোগ করবে। আমার হুকুমের গোলাম হয়ে তোমার স্বদেশী বিপ্লবী কুকুর-বেড়াল মেরে ফেলবে।
ডালিমের চোখে মুখে হাসি,অট্টহাসি। নিয়ম রক্ষার নিয়মে প্রেমরাজ পরম আনন্দে একবুক আশা নিয়ে বৃটিশদের শতভাগ সততার পরীক্ষা দিতে মঞ্চে ডালিমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেন ‘আচ্ছা বলুন তো দেখি Horns of a dilemma এর অর্থ কী?দোভাষী কৌশলে ইশরায় উত্তর ডালিম মাষ্টার আগেই জেনে গিয়ে বলেন ‘উভয় সঙ্কট ‘তাইনা?প্রেমনগরের ইংরেজি শিক্ষক বলেন,উত্তর সঠিক হয়েছে। মুহুর্মুহু করতালি, শিস, হর্ষধ্বনি নিয়ে ডালিম মাষ্টার বেশ আমোদিত পুলকিত। এবার সুচতুর ডালিম মাষ্টারের প্রশ্নের পালা। প্রশ্নের আগে প্রেমনগরবাসীদের উদ্দেশ্যে হাতে চোঙা নিয়ে এক নাতিদীর্ঘ বক্তৃতায় বলেন ‘প্রিয় প্রেমনগর ছ্যাঁকা নগরবাসী! আমার কাছে উভয় গ্রামের লোকজন সমান। আমি একজন বিলাত ফেরত। আমার আস্চর্য লাগে আপনাদের ডিসকো দাদু চাইলে আপনাদের জন্যে অনেককিছু করতে পারেন। যেমনটি করে চলেছেন স্বদেশী বিপ্লবী’দের জন্যে। উনি খাঁটি একজন দেশপ্রেমিক আপনাদের প্রিয়জন। উনি বিলাতে থেকে স্বদেশী আন্দোলন, ফরায়েজি আন্দোলন,হাজার লক্ষ ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন,মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তৈরি করে চলেছেন। কিন্তু আন্দোলন করতে গিয়ে উনি সব টাকা পয়সা হারিয়ে আজ ফতুর। চিন্তার কিছু নেই,আমি লাটসাহেব’কে বলে সব ঠিক করে দেবো। বিলাতি মদ,বায়স্কোপ, পরকীয়া, বিধবা সব সহজ করে দেবো। ব্যাভিচার করতে নারীদের অগ্রাধিকার উৎসাহিত করতে হবে। এদিকে কিছুই না করা সত্বে ও সহজ-সরল ডিসকো দাদু ভীষণ ডালিম মাষ্টারের এতো ব্যাকুল বাকবাকুম প্রশংসা শুনে স্তম্ভিত চুপ হয়ে বসে আছেন। ডালিম বলেন,প্রশ্নটা সহজ তবে বেশ চিৎকার করে বলতে হবে,যাতে দু’গ্রামের মানুষ সবাই শুনতে পায় । ডালিম এখন সাহেব হয়ে যাচ্ছেন প্রশ্না: I DON’T KNOW প্রেমরাজ মাষ্টারের গগনবিদারী চিৎকার “আমি জানিনা”
মুহুর্ত্যে বাঁধভাঙা উচ্ছাস জোয়ারে ছ্যাঁকা গ্রামের লোকজন সমস্মরে চিৎকার করে বলেন ‘প্রেমনগর জানেনা ‘ প্রেমরাজ মাষ্টার জানেনা ছি! মঞ্চে থাকা ডিসকো দাদু ইংরেজ লাট সাহেব’কে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করেন। লাটসাহেব হুংকার দিয়ে বলেন”You are bastard bloody traitor guy.”
লেখক ; রাজীব কুমার দাশ, প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক।
Gmail :rajibkumarvandari800 @gmail.com