গণবাণী ডট কম:
আমি বন্দি কারাগারে, আছি গো মা বিপদে, বাইরের আলো চোখে পড়েনা মা, জেলখানার সম্বল থালাবাটি কম্বল, এছাড়া অন্য কিছু মেলেনা, হালে এ গানের সাথে বাস্তবতা আর মেলে না। কারাগারের ভিতরে স্বাচ্ছন্দ চলাফেরা, বাইরে থেকে নারীকে এনে খুনসুটি, একান্তে সময় কাটানো এমন আমুদে জীবন কাটানোও সম্ভব।
এমনই আমুদে জীবন যাপন করছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর এক কয়েদি। করোনা মহামারীর কারণে কারাবন্দিদের যেখানে বাইরের কারো সাথে দেখা করা নিষেধ, সেখানে কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের উপস্থিতিতেই এমন অনৈতিক ও নিষিদ্ধ কাজে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন ডেপুটি জেলার। ৬ জানুয়ারি কারাগারের অভ্যন্তরে সংগঠিত এমনি ঘটনার চিত্র ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের (সিসিটিভি) ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। যার ফুটেজ নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, চ্যানেল ২৪ একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে। আর এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে কারা অধিদপ্তরে। ঘটনা তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসন ১২ জানুয়ারি তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। আর ২১ জানুয়ারি তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
আর এ ঘটনায় আবারো ওঠে এসেছে দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম কেলেংকারির স্রষ্টা হলমার্ক এর নাম। আলোচিত কয়েদীর নাম তুষার আহমেদ। তিনি হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম)। কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাটের সেই কেলেংকারিতে তানভীরের অন্যতম সহযোগী তুষার। আবার তুষার সম্পর্কে তানভীরের ভায়রা।
হলমার্ক গ্রুপের আড়াই হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির মামলার অন্যতম আসামি তুষার গ্রেফতার হয়ে এখন কাশিমপুর কারাগারে অন্তরীণ। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি কারাগারের প্রধান ফটকের ভেতরের সিটিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেলো ভিন্ন তুষারকে। হাঁটাচলার ধরন আর মুখাবয়বে কে বলবে তিনি কয়েদি।
ফুটেজে দেখা যায়, এদিন ১২টা ৫৬ মিনিট, কারাগারে দুই যুবকের সাথে বেগুনি সালোয়ার-কামিজ পরা এক নারী সেখানে আসেন। তাকে রিসিভ করেন খোদ ডেপুটি জেলার সাকলায়েন। ঐ নারী ঢোকেন পাশের কক্ষে। তারপর বেরিয়ে যান সাকলায়েন। আট মিনিট পর সাকলায়েনের সাথে অত্যন্ত স্মার্ট ভঙ্গিতে ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তুষার প্রবেশ করেন প্রধান ফটকের বাম পাশের সেই কক্ষে।
এর প্রায় ১০ মিনিট পর অফিস থেকে বেরিয়ে যান সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়। মিনিট না পেরুতেই প্রধান ফটকের বাম পাশের কক্ষ থেকে বেরিয়ে তুষার রত্না রায়ের কক্ষে যান। দুই মিনিট পর বেরিয়ে এসে তুষার সেই নারীকে নিয়ে আবার রত্না রায়ের কক্ষে যান। যাতায়াতের সময় খানিক খুনসুটিও করেন দুজনায়। হাসি ঠাট্টায় বোঝার জো নেই, কয়েদি না ভ্রমনপিপাসু। দুই মিনিট পর আবারো দুজন ফেরেন আগের কক্ষেই। এরপর ছিলেন টানা ৪৫ মিনিট। ভেতরকার ছবি অবশ্য ধরা পড়েনি ক্যামেরায়।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক বলেছেন, তারা আগেই অভিযোগটি পেয়েছেন। ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবুল কালামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরো আছেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা ফারজানা ও মো. ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবুল কালাম বলেছেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তাঁদের সাত কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। দু–এক দিনের মধ্যে তাঁরা প্রতিবেদন জমা দেবেন।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক মো. আবরার হোসেন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানালেও দর্শনার্থীদের সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কীভাবে এ ঘটনা ঘটল সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, ২১ জানুয়ারি তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার সঙ্গে উপ-সচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) মো. আবু সাঈদ মোল্লাহ ও ডিআইজি (ময়মনসিংহ বিভাগ) মো. জাহাঙ্গীর কবির সদস্য হিসেবে আছেন।
আবরার হোসেন আরো বলেন, “ঘটনা তদন্তকালে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে বিষয়টি জানানো হবে”। তিনি বলেন, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তাঁদেরও সাত কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। দোষী সবাই শাস্তি পাবেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও কাশিমপুর কারাগার ১-এর জেল সুপার রত্না রায় ও সাকলায়েনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, সাকলায়েন গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি জেল সুপাররের নির্দেশে কাজ করেছেন।