গণবাণী ডট কম:
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সবাই যখন ব্যস্ত ছিলেন নিজেকে নিয়ে, তখন মাদকবাহী একটি ট্রাক আটক করার সময় চাপা দিয়ে গাজীপুরের র্যাব-১ এর পোড়াবাড়ি স্পেশালাইজ কোম্পানীর সাহসী সদস্য মো: ইদ্রিস মোল্লাকে হত্যা করে ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায় চালক।
এ ঘটনার মাত্র ৫ দিনের মাথায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জে মাদক বিরোধী আরেকটি পৃথক অভিযান চালায় র্যাব-১০ এর একটি দল। সেখানে র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় মাদক কারবারিরা। এতে র্যাবের এক সদস্য গুরুতর আহত হন। সেখানে গোলাগুলিতে আহত হয় অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবক। তাকে পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত এ যুবকই সেই ঘাতক ট্রাক চালক। র্যাবের হাত থেকে বাঁচতে সে র্যাব সদস্য ইদ্রিসকে মোটরসাইকেলসহ ট্রাকচাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ, স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, শফি শেখই সেই পলাতক ট্রাকচালক।
শাহবাগ থানার কনস্টেবল রমজান আলী গণমাধ্যমকে বলেন, নিহত যুবকের লাশের সুরতহাল করার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে লাশটি অজ্ঞাত অবস্থায় মেডিকেল কলেজ মর্গে ছিল। পরে নিহত যুবকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও বায়োম্যাট্রিক পরীক্ষায় বেরিয়ে আসে অভিযানে নিহত যুবকের নাম মো: শফি শেখ। সে জামালপুর সদরের রানাগাছা এলাকার তারা শেখের ছেলে।
গাজীপুরের পোড়াবাড়ি র্যাব তখন জানিয়েছিল, গেল ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি আগাম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে গাজীপুরের টঙ্গী হতে মাদক ব্যবসায়ীরা ট্রাক যোগে ৩০ কেজি গাঁজার একটি চালান শ্রীপুরের মাওনা হয়ে ময়মনসিংহের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এমন খবরের ভিত্তিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান শুরু করে র্যাব সদস্যরা। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মাদকবাহী একটি ট্রাককে থামার সংকেত দেন তখন কর্তব্য পরায়ন ও সাহসী র্যাব সদস্য ইদ্রিস মোল্লা ও তার সহকর্মীরা। কিন্তু ট্রাকটি সংকেত অমান্য পালিয়ে যেতে থাকে। এসময় র্যাবের সিনিয়র ডিএডি মোঃ গোলাম মোস্তফা ও কনস্টেবল ইদ্রিস মোল্লা মোটর সাইকেল নিয়ে ট্রাকটির পিছু নিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। পিছু নেওয়া র্যাব সদস্যরা গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় পৌছলে মাদক ব্যবসায়ীরা চলন্ত ট্রাক থেকে পিছু নেওয়া র্যাব সদস্যদের মোটর সাইকেলের সামনে গাঁজার একটি বস্তা ফেলে পালিয়ে যেতে থাকে। এসময় মোটর সাইকেলের পেছনে বসা ডিএডি মোঃ গোলাম মোস্তফা সেখানে নেমে ফেলে দেওয়া গাঁজার বস্তা উদ্ধার করে ঘটনাস্থলে অবস্থান করতে থাকেন।
অপর র্যাব সদস্য ইদ্রিস মোল্লা মোটর সাইকেল নিয়ে ট্রাকটির পেছনে ধাওয়া করতে থাকেন। তিনি গাজীপুর জেলা সীমান্ত অতিক্রম করে ময়মনসিংহের ভালুকা থানা এলাকার কোকাকোলা ফ্যাক্টরীর কাছে গিয়ে ট্রাকটির গতিরোধ করেন। এসময় মাদক বহনকারী ট্রাকটি র্যাব সদস্য ইদ্রিস মোল্লাকে মোটর সাইকেলসহ চাপা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন র্যাব সদস্য ইদ্রিস মোল্লা। এ ঘটনায় তার মোটর সাইকেলটিও দুমড়ে মুচড়ে যায়। পরে মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত ঘাতক ট্রাকটিকে সিডষ্টোর এলাকায় ফেলে রেখে চালক ও হেলপারসহ মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। র্যাব সদস্যরা সেখান থেকে ট্রাকটিকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় জব্ধ করে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, অভিযানে নিহত যুবকই র্যাব সদস্যকে ট্রাক চাপা দেয়। তিনি আরও বলেন, মাদক কারবারিদের রুখতে ইদ্রিস যে নজির স্থাপন করেছেন, তার জন্য র্যাব গর্বিত। সে মৃত্যুঞ্জয়ী। ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে তার পরিবারকে এরই মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। র্যাব সদর দপ্তর থেকেও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এটা প্রক্রিয়াধীন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, শফি দীর্ঘদিন ধরেই মাদক কারবারে জড়িত ছিল। টার্গেট করে তাকে ধরার অভিযানে নেমেছিল র্যাব। সে এতটাই বেপরোয়া ছিল, র্যাব সদস্যকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। এমনকি কেরানীগঞ্জে যখন র্যাব অপারেশন চালায়, তখনও তাদের ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। ওই অভিযানে শফির তিন সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা গেছে, নিহত মোঃ ইদ্রিস মোল্লার বয়স হয়েছিল ২৮ বছর। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার কেল্লাই গ্রামে। তিনি ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল। ইদ্রিস ছিলেন তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ২০১১ সালে কনস্টেবল পদে পুলিশে চাকরি পান তিনি। ২০১৯ সালে যোগ দেন র্যাবে। ৬ বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর ২০১৯ সালে বিয়ে করেন তিনি।
ইদ্রিসের স্ত্রী শারমিন বলেন, তার স্বামী মা-বাবাসহ পুরো পরিবারকে আগলে রাখতেন। আজ সেই মানুষটা নেই। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।