আনিসুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধের লক্ষে সরকারের ঘোষিত লক ডাউনের কারণে গণ পরিবহণ বন্ধ থাকায় ধান কাটা শ্রমিকের চরম সংকটে পড়েছেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার কৃষকগণ। দেড়গুন দুইগুন বেশী মুজুরী দিয়েও এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জমিতে পাকা ধান রেখে শান্তিতে নেই এখানকার কৃষকরা।
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৫৬৫ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে লক্ষমাত্রার বেশী, ১৩ হাজর ৭১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু কৃষকরা এখন শ্রমিক সংকটের কারণে এ ফলন ঘরে তুলতে পারবে কি না তা নিয়ে শংকায় রয়েছেন। যদি দিনমজুর সংকট ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলে সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে তাদের খাবারের দু:খ থাকবে না।
কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক মনজুর হোসেন বলেন, দিনমজুরের সংকটের কারণে তিনি চরম বিপাকে পড়েছেন। এখন করোনা মহামারি কারনে এলাকায় দিনমজুর আসতে পারে না। এখন আমার ১০ বিঘা জমির ধান কাটার সময়। দিনমজুরের চাহিদা অনেক বেশি থাকায় এক হাজার টাকা দিয়েও দিনমজুর পাওয়া যায় না। দিনমজুর নিয়ে কৃষকদের এখন কাড়াকাড়ি। কাড়াকাড়ির কারণ ঝড়-বৃষ্টি আসলে সব পানিতে তলিয়ে যাবে সেই ভয়ে এখন নিরুপায়।
সনমানিয়া ইউনিয়নের কৃষক শহিদুল্লাহ সরকার নিজের দুই বিঘা জমির ধান নিজেই একা একা কেটে ঘরে তুলছেন শ্রমিকের অভাবে। তিনি বলেন, দিনমজুর এখন পাওয়াই যায় না কোথায় খুজবো। আগে দিনমজুররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাজ খুঁজতো এখন আমরা তাদেরকে খুঁজি। এখন লকডাউন চলছে দিনমজুর আসছে না সামনে বৃষ্টি আসবে বৃষ্টিতে ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাবে, যে কারণে যতটুকু পারি একলা কাইটা রাইখা দেই।
একই ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামের কৃষক হানিফা ও তার স্ত্রীকে নিয়ে তার এক বিঘা ক্ষেতের ধান নিজেরাই কাটতেছেন দিনমজুরের অভাবে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক বলেন, কৃষকরা যদি আমাদের কাছে চাহিদা পত্র দেয় তাহলে আমরা শ্রমিক এনে দেয়ার জন্য সহায়তা করব। যেন তাদের লকডাউনের মধ্যে আসতে কোন সমস্যা না হয়। দিনমজুর আমাদের মাধ্যমে আসবে এবং যাবে। এখন করোনার মহামারীর কারণে লকডাউন চলমান রয়েছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের দিনমজুর নির্ভর না হয়ে যান্ত্রিক নির্ভর কৃষিকাজে দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ভবিষ্যৎ দিনমজুর সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। যে কারণে এখন থেকে কৃষকদের যন্ত্রনির্ভর কৃষি কাজের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখন ধান কাটার যন্ত্র বের হয়েছে যে যন্ত্রের সাহায্যে এক ঘন্টায় তিন বিঘা জমির ধান কাটা যায়। কৃষকদের কৃষিকাজে খরচ ও সময় বাঁচাতে দিনমজুর নয় যন্ত্রনির্ভর কৃষি কাজের উদ্যোগ নিতে হবে।