গণবাণী ডট কম:
পৃথিবী গোলকধাঁধায় ভরা, ইউএনও সাহেব সরেজমিন গিয়ে দেখলেন ভিন্নরূপ, যে ব্যক্তি মই বেয়ে ওঠানামা করছেন সেই দিকে যাওয়ার আসলে কোনো রাস্তা নেই, তিনি মই বেয়ে নিছক অভিনয় করছেন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। তাঁর বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা রয়েছে। তিনি এ বাড়ি আগেই বিক্রি করেছেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য কিছুদিন সময় চেয়ে ছিলেন, এখন ক্রেতাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছেন। তিনি টাকা নিয়েছেন, জমি বিক্রি করেছেন, কিন্তু যাবেন না, আবার মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের আনুকূল্য নেয়ার চেষ্টা করছেন। বড় আজব পৃথিবীর মানুষ কখনো ধনী শোষণ করে গরিবকে আবার কখনো গরীব প্যাঁচে ফেলে নাকাল করে ধনীকে।
না প্রিয় পাঠক এটি কোন সংবাদের অংশ নয়। এটি আজ দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি স্ট্যাটাস। আর স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন গাজীপুরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, যিনি পেশাদারিত্ব, সততা ও কর্তব্য নিষ্ঠার মাধ্যমে জেলাবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে জেলার বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকগণও নানারুপ চর্চা করছেন। সংগত কারণেই তাঁর এ স্ট্যাটাস দেয়ার কারণ অনুসন্ধানের আগ্রহ হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেল, গাজীপুরের শ্রীপুরে চকপাড়া গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আতাবুল্লাহ তার ভিটেমাটি বিক্রি করেন এএএ টেক্সটাইল মিলস লিঃ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নিকট। তবে বিক্রির বেশ কিছুদিন পরও দখল ছাড়ছিলেন না তিনি।
কর্তৃপক্ষ বিক্রেতাকে কয়েক দফা সময় দেয় জমির দখল ছাড়ার জন্য, কিন্তু কর্তৃপক্ষের কথায় গা মাখছিলেন না তিনি। পরে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রয়কৃত জমিতে সীমাো প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করলে আরও কিছু দিনের সময় প্রার্থনা করেন আতাবুল্লাহ। কিন্তু এবার প্রতিষ্ঠান সময় দিতে নারাজ। জমির দখলে রাখতে ভিন্ন ফন্দি আটেন আতাবুল্লাহর পরিবার। তারা সাজিয়ে ফেলেন অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক কাহিনী।
বাসার পাশেই সীমানা প্রাচীরে মই লাগিয়ে তারা উঠানামা করার ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। পরে রাস্তা বন্ধের নামে অবরুদ্ধ হওয়ার চিত্র কাহিনী ধারণ করে প্রচার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রশাসকের বক্তব্য গ্রহণ করেন। জেলা প্রশাসক তদন্ত করে ঘটনা সত্য হলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
আর ঘটনা জানার পর অর্থাৎ সাংবাদিকের নিকট বক্তব্য দেয়ার পর পরই জেলা প্রশাসক শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান খবর প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য। সেখানেই বেরিয়ে আসে অবরুদ্ধ হওয়ার মিথ্যা কাহিনী তৈরীর বিষয়। জেলা প্রশাসক প্রকৃত সত্য জানার পর টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের আগেই উক্ত সাংবাদিককে বিষয়টি অবহিত করেন। তারপরেও এ নিয়ে একটি বেসরকারী টেলিভিশনে সচিত্র সংবাদ প্রচার করা হলে জেলাবাসীর বিভ্রান্তি দুর করার লক্ষে সকলের সামনে প্রকৃত সত্য উপস্থাপনের জন্য উক্ত স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারী বলেন, সোমবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে কৃষক পরিবারটি যে বাড়ীতে রয়েছে সে বাড়ীতে যাতায়াতের ভিন্ন রাস্তা রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হওয়া মই দিয়ে একটি পরিবারের উঠানামা করা, অবরুদ্ধ হওয়া সবই ছিল অভিনয়।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষক পরিবারটি বিক্রি হওয়া জমির দখল না ছাড়তে এমন অভিনয় তৈরী করেছেন। এরপরও উভয়পক্ষকে যার যার মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসার জন্য বলা হলেও অবরুদ্ধ হওয়ার অভিনয় করার পরিবারটি আসেনি। জমির ক্রয়কৃত মালিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র প্রদর্শন করে গেছেন।
এ বিষয়ে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, এ জমির সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই, অথচ আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে অপপ্রচার চালোনো হচ্ছে, বলা হচ্ছে জমি নাকি আমি দখল করেছি। তবে প্রতিষ্ঠান জমি কিনে যখন দখল পাচ্ছিল না তখন আমার কাছে নালিশ করেন। আমি তাদের কাগজপত্র দেখে আতাবুল্লাহকে বিক্রিকৃত জমির দখল বুঝিয়ে দিতে বলি। এতেই আতাবুল্লাহরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রচারাণা চালাচ্ছেন
এএএ টিক্সটাইল নামের প্রতিষ্ঠানের জমির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক সুকুমার রায় বলেন, সম্প্রতি ভিন্ন ভিন্ন দলিলের মাধ্যমে কয়েকটি খতিয়ানে ১৫৯শতাংশ জমি উক্ত আতাবুল্লাহ গংরা আমাদের নিকট বিক্রি করেছেন। বিক্রির পর অন্যত্র বাড়ী তৈরীর জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন বিধায় আমাদের নিকট কিছু সময় চায়, তাদেরকে প্রথম দফায় সে সময় দেয়া হয়। পরে স্থানীয় কিছু মানুষের ইন্ধনে এ জমির দখল ছাড়তে তারা নানা ধরনের তালবাহানা শুরু করে ফের আরো সময় দাবী করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত উৎপাদনে যাওয়ার স্বার্থে এখনই কাজ শুরু প্রয়োজন হওয়ায় তাদেরকে বিক্রিকৃত জমির দখল ছাড়তে বলা হয়। বিভিন্ন ভাবে বসার পরও তারা সমাধানের পথে না হেটে নানাভাবে প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন ভাবে মানববন্ধন করেও অনেককে বিভ্রান্ত করছেন।
এদিকে মিথ্যা ঘটনা তৈরী করে প্রচারের বিষয়ে অভিযুক্ত আতাবুল্লাহর বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার স্ত্রী নাজমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেছেন, পুরো বিষয়টি তার স্বামী বলতে পারবে। তবে গতকাল (সোমবার) থেকে তিনি বাড়ীতে নেই।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। কাউকে অবরুদ্ধ করা মানবিক অধিকার হরন করার সামিল। বিভিন্ন মাধ্যমে এমন সংবাদ একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে জানার সাথে সাথে আমি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান করি। আমার ইউএনও সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন ধরণের সত্যতা পায়নি। বর্তমানে তিনি যে বাড়ীতে রয়েছেন সেখানে প্রবেশের ভিন্ন সড়ক রয়েছে। সে মই বেয়ে অভিনয় করে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে মানুষের সহানুভুতি পাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরে জানা যায়, তার পুরো ভিটেমাটিই সে স্থানীয় এক কারখানার কাছে বিক্রি করেছে, আরও কিছুদিন সে এখানে থাকার দাবী জানিয়েছিল, সে প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় সে অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক তৈরী করেছে।