গণবাণী ডট কম:
স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে প্রেমিককে মারধর করেন স্বামী। একই কারণে স্ত্রীকেও শাসন করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রেমিকের সাথে মিলে স্বামীকে খুন করে স্ত্রী। মরদেহ যাতে চিনতে না পারে সে জন্য করাত দিয়ে মাথা, দুই হাত, দুই পা বিচ্ছিন্ন করে এবং চাপাতি দিয়ে পেট কেটে ৬ টুকরা করে শরীরের বিভিন্ন অংশ পলিথিনে মুড়িয়ে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়।
ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পর খুনের রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত স্ত্রী ও তার প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) এর গোয়েন্দা পুলিশ।
হতভাগ্য স্বামীর নাম সুমন মোল্লা (২৮)। তিনি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানার গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে। খুন হওয়ার আগে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের সারদাগঞ্জ এলাকার শফিউল্লাহর বাড়ীতে ভাড়া থাকতেন।
গ্রেফতার আসামীরা হলো নিহতের স্ত্রী আরিফা বেগম (২৪)। তিনি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার নারায়নপুর গ্রামের মৃত আশ্রাফ আলীর মেয়ে। অপরজন আরিফার প্রেমিক তনয় সরকার (৩১)। সে ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার নরকোনা গ্রামের অদিত্য সরকারের ছেলে। তারা উভয়ে কাশিমপুর এলাকায় একটি তৈরী পোশাক কারখানায় চাকরী করে। চাকরী সূত্রেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আজ রবিবার (৩০ মে) দুপুরে গাজীপুর মেট্রাপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জিএমপি উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান।
তিনি আরো জানান, কয়েক বছর আগে সুমন মোল্লার সাথে আরিফার বিয়ে হয়। এটি ছিল সুমনের তৃতীয় এবং আরিফার দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর তনয় সরকারের সাথে আরিফার অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি সুমন মোল্লা জানতে পারে। এ কারণে সুমন মোল্লা তনয়কে কয়েকবার মারপিট করে এবং স্ত্রীকে শাসন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী আরিফা ও তার প্রেমিক তনয় সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে আরিফা সুমনকে দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায়। পরে আরিফা তনয়কে ফোন করে ডেকে আনে এবং দু’জনে মিলে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরাধে করে সুমনক হত্যা করে মরদেহ বসত ঘরের মধ্যে রেখে দেয়। পরদিন ২০ এপ্রিল তারা করাত দিয়ে মরদেহের মাথা, দুই হাত, দুই পা বিচ্ছিন্ন করে এবং চাপাতি দিয়ে পেট কেটে ফেলে। নিহতের হাত, পা ও মাথাবিহীন শরীর স্ত্রী আরিফার ব্যবহৃত কাথা দিয়ে মুড়িয়ে বেধে কাশিমপুর হাজি মারেকট সারদাগঞ্জ এলাকার জামাল উদ্দিনের সেফটিক ট্যাংকিতে ফেলে দেয় এবং দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন ৫টি অংশ পলিথিনে মুড়িয়ে মহানগরীর কাশিমপুরের চক্রবর্তী তেঁতুইবাড়ী এলাকায় মাজার মিল সংলগ্ন ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়।
তিনি আরো জানান, গত ২১ এপ্রিল দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারদারগঞ্জের উল্লেখিত স্থান থেকে মাথা ও হাত-পা বিহীন অজ্ঞাত এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে কাশিমপুর থানায় মামলা করেন।
হত্যার রহস্য উদঘাটনে জিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান ও অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমদের নেতৃত্বে পুলিশ কাজ করে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্বের ভিত্তিতে গত ২৯ মে আসামীদের তাদের কারখানা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তারা হত্যার কথা ও হত্যার কারণ স্বীকার করেছে। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পর সুমনের বিচ্ছিন্ন হাত, পা ও মাথা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, করাত এবং সুমনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জিএমপি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, জিএমপি ভারপ্রাপ্ত (মিডিয়া) সহাকারী কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার, কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবে খোদা।