নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুই শিশু কন্যাসহ এক মা রোববার দুপুরে বানার (শীতলক্ষ্যা) নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা নদী থেকে এক শিশু কন্যাকে উদ্ধার করলেও এক কন্যাসহ মা এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী বাজারের পাশে সিংহশ্রী দারুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার দক্ষিণ পার্শ্বে নদীর তীরে।
উদ্ধার হওয়া শিশুর নাম তাহমিদা আক্তার (৯)। নিখোঁজ দুইজন হলেন মা আরিফা আক্তার (৪০) ও কন্যা মুর্শিদা আক্তার (৭)। আরিফা আক্তার গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের বিবাদিয়া গ্ৰামের মোহাম্মদ আলীর (মোয়া মুন্সী) ছোট মেয়ে ও নারায়ণগঞ্জের মাদানীগড় এলাকায় মৃত আ: মালেকের স্ত্রী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে আরিফার স্বামী আব্দুল মালেক মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকে তিনি দুই কন্যাকে নিয়ে পিতার বাড়িতে বসবাস করছিলেন। অভাব অনটনের কারণে সম্প্রতি তার আচরণ ও কথাবার্তায় মানসিক ভারসাম্যহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছিল। রোববার দুপুর দেড়টার সময় আরিফা তার শিশু কন্যা তাহমিনা আক্তার ও মুর্শিদা আক্তারকে সাথে নিয়ে সিংহশ্রী সেতুর একটু দক্ষিণে বানার নদীতে ঝাঁপ দেন। নদী তীরের অদূরেই তাহমিনা মায়ের হাত থেকে ছুটে গিয়ে নদীতে ভাসমান একটি বাঁশ আঁকড়ে পড়ে থাকে। স্থানীয় জেলেরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাহমিনাকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। পরে তার স্বজন, এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও অপর দুজনকে উদ্ধার করতে পারেননি।
নিখোঁজ আরিফার বড় ভাই এমারত হোসেন বলেন, আমরা ছোট বোন আরিফা পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। লোকমুখে শুনতে পাই তার দু বাচ্চা নিয়ে সে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। আমার বোন ও তার ছোট মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে।
নিহতের বড় মেয়ে তাহমিনা মায়ের হাত থেকে ছুটে নদীতে থাকা বাঁশের আটি ধরে নদীর পানিতে ভেসে থাকে। তার কান্নাকাটি শুনে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে। সিংহশ্রী বাজারে পল্লী চিকিৎসক মোস্তফা ডাক্তারের ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এখন সে সুস্থ রয়েছে।
উদ্ধারের পর তাহমিনা জানায়, মা আমাকে ও আমার ছোটবোন মুর্শিদা কে সাথে নিয়ে নদীর পাড়ে আসে। ছোট বোনকে কোলে নিয়ে এক হাতে আমাকে ঝাপটে ধরে নদীতে ঝাঁপ দেয়। মায়ের হাত থেকে ছুটে আমি ওই বাশ দেখতে পেয়ে তা ধরে থাকি। আশেপাশের লোকজনরা আমাকে উদ্ধার করে মোস্তফা ডাক্তার দোকানে নিয়ে আসে।
নিখোঁজ নারীর স্বজনদের বরাত দিয়ে কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এ এস এম নাসিম জানান, ৩ বৎসর পূর্বে আরিফার পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি স্বামী আব্দুল মালেক মারা যান। এরপর থেকেই অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন তিনি এবং দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই বসবাস করেন। নানা কারণে ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হন আরিফা। তাকে মানসিক রোগের চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছিল।
তিনি আরও জানান, শীতলক্ষ্যা নদীটি এখন প্রচণ্ড স্রোত এবং পানিও বেড়েছে। মা তার শিশু দুই মেয়েকে নিয়ে নদীর পার থেকে হঠাৎ ঝাঁপ দেয়ার পর একজনকে এলাকাবাসী উদ্ধার করতে পারলেও অপর দুইজন স্রোতের টানে ভেসে গেছে। এখনও তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
কাপাসিয়া ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার ছাবেদ আলী খান উদ্ধার তৎপরতা সম্পর্কে বলেন, এ ঘটনায় দুইজন নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে তাদের জিম্মায় রাখা হয়েছে। তারা টঙ্গীর ডুবরি দলকে খবর দেয়া দিয়েছেন। দলটি আসলে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।