গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন আদাবৈ এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক বিউটিশিয়ানের লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং মূল পরিকল্পনাকারী নিহতের স্বামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। হত্যাকান্ডের পর থেকে স্বামী পলাতক ছিল।
নিহতের নাম রুবিনা খাতুন (২৯)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর আদাবই এলাকার আব্দুস সালামের মেয়ে। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে বাবার জমিতে ’রাজকণ্যা বিউটিপার্লার’ স্থাপন করে পার্লার ব্যবসা চালাচ্ছিলেন।
গ্রেফতার আসামী ও রুবিনার স্বামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষ ওরফে মৃদুল হাসান (২৭)। গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের খুদেবরমী এলাকার নিতাই ঘোষের ছেলে।
বুধবার সকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্প, গাজীপুরের কোম্পানী কমান্ডার মেজর এ এস এম মাঈদুল ইসলাম।
তিনি আরো জানান, গত ৪ জুন রাতে জিএমপি সদর মেট্রো থানাধীন আদাবৈ এলাকার রাজকন্যা বিউটি পার্লারের পেছনের রুমে হাত-পা ও মুখ বাঁধা এবং কাঁথা দিয়ে মুখ পেঁচানো ও মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় রুবিনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে রুবিনার স্বামী পলাতক ছিলেন। গোয়েন্তা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে ৬ জুন রাতে পাবনা জেলার সদর থানাধীন মৃত বাবলুর বাসায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো জানান, র্যাবর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষ রুবিনা আক্তারকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং এই চাঞ্চল্যকর হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয়।
তিনি জানান, প্রায় ১ বছর ২ মাস পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সূত্র ধরে পরিচয়ের তাদের মধ্যে পরিচয় ও পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের শুরুর দিকে তাদের মাঝে সম্পর্ক ভালো থাকলেও পরবর্তীতে দাম্পত্য কলহ এবং একে অন্যকে পরকীয়ার সন্দেহে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে আসামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষ রুবিনা আক্তারকে দাম্পত্য কলহের জের ধরে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এ বিষয়ে ভিকটিম রুবিনা আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ জানালে আসামী
মিঠুন ভিকটিমকে ছেড়ে আলাদা থাকতে শুরু করে।
তিনি আরো জানান, পরে আসামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষ রুবিনা আক্তার ভরণ-পোষণ এবং দেনমোহরের টাকা প্রদানের জন্য মিঠুন চন্দ্র ঘোষকে চাপ দিতে থাকে। এতে মিঠুন চন্দ্র ঘোষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং রুবিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৪ জুন বিকালে তার অন্যতম সহযোগী সুমা রানী ঘোষ (৩২) এর মাধ্যমে রুবিনার রাজকন্যা বিউটি পার্লারে প্রবেশ করে এবং অপর সহযোগী রাকিব (২৮) কে পার্লারের বাইরে পাহারায় বসিয়ে রাখে। পার্লারে প্রবেশ করে মিঠুন চন্দ্র ঘোষ তার সহযোগী সুমা রানী ঘোষের সহায়তায় আশে পাশে পড়ে থাকা কাপড় দিয়ে রুবিনার হাত-পা ও মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।পরে তারা রুবিনার ব্যবহৃত ২ টি স্মার্টফোন, স্বর্ণের দুটি কানের দুল নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় রুবিনার মা মা আছিয়া বেগম বাদী হয়ে জিএমপি সদর মেট্রো থানায় অজ্ঞাত নামা কয়েকজনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো জানান, আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষকে পাবনা জেলার সদর থানাধীন দিলালপুর নারিকেল বাগান এলাকার মৃত বাবলুর বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার দখল হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত ২টি টাচযুক্ত মোবাইল ফোন সহ ১টি বাটনযুক্ত মোবাইল ফোন, আসামীর এনআইডি কার্ডের কপি ও নগদ ৬৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।