গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন আদাবৈ এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক বিউটিশিয়ানের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী নিহতের স্বামীর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে মহানগর পুলিশ। গ্রেফতারের পর তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
নিহতের নাম রুবিনা খাতুন (২৯)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর আদাবই এলাকার আব্দুস সালামের মেয়ে। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে মহানগরীর সদর থানাধীন আদাবৈ সাইনবোর্ড সাকিনস্থ বাবার জমিতে ’রাজকণ্যা বিউটিপার্লার’ স্থাপন করে পার্লার ব্যবসা চালাচ্ছিলেন।
গ্রেফতার আসামীরf হলো, মোঃ রাকিবুল ইসলাম (২২)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন আদাবৈ এলাকার আবুল কালামের ছেলে। অপর আসামী সুমা রানী ঘোষ (৩০) গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন খুদে বর্মী এলাকার মৃত ফনিন্দ চন্দ্ৰ ঘোষের মেয়ে। এ দুজনকে ঘটনার পরপরই সন্দেহজনকভাবে জিগ্যাসাবাদের জন্য আটক করেছিল পুলিশ। পরে তারা জিগ্যসাবাদে ঘটনায় নিজেরা জড়িত বলে স্বীকার করে এবং ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে।
তারা জানায়, এঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও রুবিনার স্বামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষ ওরফে মৃদুল হাসান (২৭)। গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের খুদেবরমী এলাকার নিতাই ঘোষের ছেলে।
রুবিনার স্বামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষ ওরফে মৃদুল হাসান (২৭) কে পাবনা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যা ব-১।
গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, প্রায় ১ বছর ২ মাস পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সূত্র ধরে পরিচয়ের তাদের মধ্যে পরিচয় ও পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের শুরুর দিকে তাদের মাঝে সম্পর্ক ভালো থাকলেও পরবর্তীতে দাম্পত্য কলহ এবং একে অন্যকে পরকীয়ার সন্দেহে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে আসামী মিঠুন চন্দ্র ঘোষ রুবিনা আক্তারকে দাম্পত্য কলহের জের ধরে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এ বিষয়ে ভিকটিম রুবিনা আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ জানালে আসামী
মিঠুন ভিকটিমকে ছেড়ে আলাদা থাকতে শুরু করে।
তিনি জানান, গত ৪ জুন রাত ৮টার দিকে রুবিনা আক্তারের পার্লারের পিছনের রুমে রুবিনার মা আছিয়া বেগম মেয়ের জন্য খাবার দিতে গিয়ে দেখতে পান, তার মেয়ের হাত, পা, মুখ বাঁধা, কাঁথা দিয়ে মুখ ডাকা এবং উপুড় অবস্থায় পড়ে আছে। পরে তিনি মেয়েকে উপড় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত তার মুখ থেকে কাঁথা সরিয়ে মেয়ের মুখ নীলাফোলা ক্ষত জখমপ্রাপ্ত এবং মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তিনি মেয়ের এরূপ অবস্থা দেখে ডাক-চিৎকার করিলে আশপাশের স্থানীয় লোকজন এসে বাদীর মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পায় এবং সদর মেট্রো থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে লোকজনদের মৃত্যুর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
জিয়াউল ইসলাম আরো জানান, পরে এ ঘটনায় নিহতের মা আছিয়া বেগম বাদি হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর) আবু তোরাব মোঃ শামসুর রহমানের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর) রেজওয়ান আহমেদের নেতৃত্বে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলামসহ সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার পরবর্তী ৬ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনসহ ২ জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ১টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ২দিনের পুলিশ রিমান্ড জিগ্যাসাবাদ করা হয়। আসামী রাকিবুল ইসলাম ও সুমা রানী ঘোষ ৬ জুন ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আসামীরা জানায় যে, নিহত রুবিনা আক্তারের স্বামী বোরখা পরে মোটরসাইকেল যোগে গিয়ে পরস্পর যোগসাজসে হত্যা করে মর্মে স্বীকার করে। নিহত রুবিনা আক্তার রাজকন্যা বিউটি পার্লার দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে এবং বিউটি পার্লারের পিছনের রুমে বসবাস করিয়া করছিল। বিয়ের পর হতে রুবিনার স্বামী মৃদুল সাংসারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া বিবাদ করত। রুবিনাকে কোন প্রকার ভরণ-পোষণ দিত না। একারণে রুবিনা আক্তার ভরণ-পোষণ এবং দেনমোহরের টাকা প্রদানের জন্য মিঠুন চন্দ্র ঘোষকে চাপ দিতে থাকে। এতে মিঠুন চন্দ্র ঘোষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং রুবিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৪ জুন বিকালে তার অন্যতম সহযোগী সুমা রানী ঘোষ (৩২) এর মাধ্যমে রুবিনার রাজকন্যা বিউটি পার্লারে প্রবেশ করে এবং অপর সহযোগী রাকিব (২৮) কে পার্লারের বাইরে পাহারায় বসিয়ে রাখে। পার্লারে প্রবেশ করে মিঠুন চন্দ্র ঘোষ তার সহযোগী সুমা রানী ঘোষের সহায়তায় আশে পাশে পড়ে থাকা কাপড় দিয়ে রুবিনার হাত-পা ও মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।পরে তারা রুবিনার ব্যবহৃত ২ টি স্মার্টফোন, স্বর্ণের দুটি কানের দুল নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।