গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন তিন সড়ক এলাকায় ৩ মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বুধবার সকালে সড়ক অবরোধ করে কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিক। পরে শ্রমিকদের সমস্যাটি জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের নজরে আসলে তিনি সমস্যাটি সমাধান করে শ্রমিকদের পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে দুই ঘন্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার তারা। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বকেয়া বেতন প্রদানের বিষয়ে মালিক ও শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে জেলা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির জরুরী সভা আহবান করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে বুধবার শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে বাড়ী ফিরে গেলেও আজ বৃহস্পতিবার সকালে কয়েক হাজার শ্রমিক মিছিল নিয়ে গাজীপুরের রাজবাড়ীতে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জমায়েত হয়েছে। এসময় তারা তাদের পাওনা বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের টাকা পরিশোধেরে দাবী জানান।
পরে জেলা প্রশাসকরে প্রতিনিধি এনডিসি মোস্তফা আব্দুল্লাহ নুর ও সহকারী কমিশনার ও সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট মো: শোয়েব শাত ইল ইভান শ্রমিকদের কাছে ছুটে আসেন। তারা শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। তারা উভয়ে শ্রমিকদের জানান, শ্রমিকদের সমস্যাটি সমাধান করার জন্য আজ বিকালে জেলা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির জরুরী সভা আহবান করা হয়েছে। সেখানে আপনাদের (শ্রমিক) প্রতিনিধি ও মালিকপক্ষ উপস্থিত থাকবে। আমরা আশা করি সভায় আপনাদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
এসময় কয়েকজন শ্রমিক জানান, আগেও এ ধরণের আলোচনা হয়েছে, সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এসময় ঐ দুই কর্মকর্তা তাদের আশ্বস্ত করেন, আগের মত আর হবে না। আজকের সভার মাধ্যমে সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান হবে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন।
এসময় শ্রমিকরা জানান, তারা বিকালে সভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব।
শ্র্রমিকরা জানায়, মহানগরীর সদর থানাধীন তিন সড়ক এলাকায় স্টাইলক্রাফট নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় ৩ হাজারের মত শ্রমিক কাজ করে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে স্টাইলক্রাফট নামের তৈরি পোশাক কারখানাটিত কয়েক মাস পরপরই বেতন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। কারখানাটিতে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। মালিক পক্ষের কাছে জুন, জুলাই মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পাওনা রয়েছে। বকেয়া বেতন-ভাতা নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুলাই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১ আগষ্ট তাদের বেতন পরিশোধ করার কথা। কিন্তু মালিক পক্ষ এক তারিখে বেতন পরিশোধ না করে কারখানা থেকে চলে যায়। পাওনা বকে না পেয়ে ১ আগস্ট শ্রমিকরা অসন্তুষ্ট হয়েও বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু বুধবার সকালে ৮টার দিকে কারখানায় কাজে যোগদান করতে এসে শ্রমিকরা কারখানার ঘেটে কারখানায় বন্ধের নোটিশ দেখতে পায়। বকেয়া পরিশোধ না করে কোন কিছু না জানিয়ে এভাবে হঠাৎ রাতে আধারে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেওয়ায় সকালে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। উত্তেজিত শ্রমিকরা ঢাকা-জয়দেবপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। একারণে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পড়েছেন যাত্রী ও পথচারীরা । পরে ঘটনাস্থলে যায় মহানগর ও শিল্প পুলিশ।
কারখানায় কর্মরত লতা সাবিনা ও মল্লিকা সহকয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, চলতি মাসসহ তিন মাসের বেতন বকেয়া থাকায় বাড়ি ভাড়া, দোকানের বাকি টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই অবিলম্বে বেতন ভাতা পরিশোধে সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন শ্রমিকরা।
শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মোঃ রেজাউল করিম জানান, বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার মালিকের সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১ আগষ্ট জুন মাসের বেতন ও ৮ আগষ্ট শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়ার কথা। কিন্তু মালিক পক্ষ বেতনাদি পরিশোধ না করেই কারখানা ছয় দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। বুধবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে আন্দোলনে নামেন।
জিএমপির সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়া ইসলাম জানান, বুধবার সকালে শ্রমিক আন্দোলনের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের আলোচনা বৃহস্পতিবার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আস্বাস দিলে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে ১০টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।