নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর) :
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মসজিদের জায়গায় দখল করে রাস্তা নিতে না দেয়ায় মসজিদ কমিটির সভাপতির উপর নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা সভাপতির দুই হাত একাধিক জায়গায় ভেঙে দেয়, ডান হাতের কব্জির রগ কেটে দেয়, পায়ের হাঁটুর নিচের রগসহ মাংসপেশি কেটে দিয়ে কোমরের নিচের অংশ ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সন্ত্রাসী হামলায় শিকার সভাপতির নাম মোঃ নুরুল ইসলাম (৫০)। তিনি বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভ খাঁ আঃ হাই সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও বারিষাব গ্ৰামের সরকার বাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি।
গত রোববার রাত বারোটায় দিকে নিজের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার দোকান বন্ধ করে বাড়ী ফেরার পথে ৭/৮ জন সন্ত্রাসী এই হামলা চালায়।
নুরুল ইসলাম সরকারের ছোট ভাই আহসান উল্লাহ সরকার জানান, আমার ভাই গত রোববার রাত সাড়ে বারোটায় দিকে ওষুধের দোকান বন্ধ করে বাড়িতে আসছিল। পথে নূরার পুলের পূর্ব পাশে পৌছালে ৭/৮ জন সন্ত্রাসী লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা ভাইয়ের ডান হাতের দুই জায়গায় ও বাম হাতের এক জায়গায় ভেঙে দেয় এবং ডান হাতের কব্জির রগ কেটে দেয়। শরীরের কোমরের নিচের অংশে সন্ত্রাসীদের ভেঙে দেয়। একটি পায়ের হাঁটুর নিচের রগসহ মাংসপেশি কেটে দেয়।
তিনি আরো বলেন, আমার ভাই এখন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সোমবার বিকেলে ওই হসপিটালে ভাইয়ের অপারেশন হয়েছে। এখন হসপিটালে মুমূর্ষ অবস্থায় রয়েছে। আমার ভাই অবস্থা ভালো নয়।
এলাকাবাসী শফিকুল ইসলাম জানান, মসজিদের জায়গা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। মসজিদের জায়গা দখল করে এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন লোক রাস্তা নিতে চেয়েছিল। মসজিদ কমিটির সভাপতি ও এলাকাবাসী সকলেই মসজিদের জায়গা দিয়ে রাস্তা করতে বাধা প্রদান করেন। কিছুদিন আগে মসজিদের জায়গাটি চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা শুরু করা হয। মসজিদের জায়গা দখল করে রাস্তা নিতে না পারায় তার উপর এই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ রাস্তা নিয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। মসজিদের জায়গা নিয়ে মামলা থাকায় এবং মসজিদের জায়গা দিয়ে কোন রাস্তা নেয়া যাবে না আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রভাবশালী মহল রাস্তা নিতে পারেননি। তার উপর এই হামলা চালানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর টাকায় ঐ এলাকায় একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। মসজিদের জায়গা নিয়ে আপত্তির বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বসে মিমাংসা করে রাস্তা নির্মাণ করতে উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছিল। হামলার ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ে আহত শিক্ষকের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড. আমানত হোসেন খান বলেন, উপজেলা পরিষদে আবেদন করার পর আলোচনা করে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্ধ দেয়া হয়। পরে এসব বাস্তবায়নের দায়িত্ব উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের। মসজিদের জায়গা নিয়ে বিরোধটি স্থানীয়ভাবে সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে মিমাংসা করে নিতে বলা হয়েছিল। হামলার ঘটনাটি শুনেছি। এটি দু:খজনক। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর জানান, ঘটনা শুনেছি। লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।