গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর নীলের পাড়া এলাকায় অটোরিক্সা ছিনতাই করার সময় হত্যা করা হয় কিশোর অটো চালককে। এ ঘটনার ৬ বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলা।
গ্রেফতারের পর ধৃত আসামীকে গত বুধবার বিকালে আদালতে হাজির করা হলে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে আসামী নিজেকে জড়িয়ে হত্যার উদ্দেশ্য ও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে।
নিহত অটোচালকের নাম সাকিব (১৮)। তিনি ঢাকা মহানগরীর উত্তরা থানার ফাদাবাজ এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল মর্গে ভিকটিমের মৃতদেহ সনাক্ত করেন এবং ভিকটিমের নাম ।
গ্রেফতার আসামীর নাম মোঃ পারভেজ (৪০)। তিনি জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ থানার নিলক্ষিয়া দক্ষিন বেপারী পাড়া এলাকার মোঃ মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তাকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানাধীন গড়গোবিন্দ্রপুর হাজীর মোড় সফিকুল ইসলাম এর পোল্ট্রি ফার্ম হতে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান,বিপিএম-সেবা।
তিনি আরো জানান, ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে জয়দেবপুর থানার এসআই (নিঃ) মোঃ এনায়েত কবীর রাত্রী কালীন মোবাইল ডিউটি করার সময় বেতার সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারেন, জয়দেবপুর থানাধীন দক্ষিন নীলের পাড়া সাকিনস্থ জয়দেবপুর টু পূবাইল রোডের মুক্তিযোদ্ধা জিন্নত আলীর বাড়ীর সাথে রাস্তার পশ্চিম পাশে খালি জায়গায় অজ্ঞাত নামা পুরুষের মরদেহ পড়ে রয়েছে। পরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটা রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পড়ে রয়েছে। মরদেহের ডান কানে একটি কাটা জখম, ডান কানের নীচে দুটি কাটা জখম, দুই চোখে কাটা জখম, গলার ডান পাশে অনুমান ৪ ইঞ্চি কাটা জখম, কাধে পাঁচটি কাটা জখম, ডান হাতের কনুইয়ের উপরে এবং কব্জির নীচে কাটা জখম, বাম হাতের কনুইয়ের উপর তিনটি এবং কব্জির উপরে ও নীচে পাঁচটি কাটা জখম, বুকে বারটি কাটা জখম, নাভির নীচে এবং ডান পাশে একটি কাটা জখম, পিঠে ছাব্বিশটি কাটা জখম আছে। তিনি মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। পরে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গাজীপুর মর্গে প্রেরণ করেন।
তিনি আরো জানান, প্রথম পর্যায়ে মরদেহের পরিচয় সনাক্ত না হওয়ায় এসআই মোঃ এনায়েত কবীর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে খবর পেয়ে নিহতের পিতা আবুল হাসেম গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল মর্গে মরদেহ দেখে সেটি তার ছেলে সাকিব (১৮) বলে সনাক্ত করেন। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে তদন্তকালে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট “সত্য” দাখিল করেন। পরে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি আরো জানান, মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ জামাল উদ্দিন মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তকালে ধৃত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামিসহ সহযোগী আসামিগন অটোরিক্সা ছিনত্ইাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। গ্রেফতারকৃত আসামি তার সহযোগী আসামিগন পরস্পর যোগসাজসে অটো ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে ঘনটার দিন সাকিবের অটোরিক্সাটি গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গির বউ বাজার হতে মীরের বাজার পর্যন্ত ৩ শ টাকায় ভাড়া করে। পরে আসামিগন সবাই মিলে অটোরিক্সায় উঠে টঙ্গী বউ বাজার হতে মীরের বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথে নীমতলা ব্রীজের কাছে পৌছালে গ্রেফতারকৃত আসামি পারভেজ এর সহযোগী আসামি অটো চালক সাকিবকে ড্রাইভিং সিট হতে সরিয়ে পাশের সিটে বসতে বলে। অটো চালক রাজী না হওয়ায় আসামিগন কৌশলে প্রসাব করার কথা বলে অটোরিক্সাটি দাঁড় করায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামি তার সহযোগী আসামিদের নিয়ে ভিকটিমকে জোর পূর্বক টানা হেঁচড়া করে অটোরিক্সা হতে নামিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। সেখানে গ্রেফতারকৃত আসামিসহ সহযোগী আসামিদের সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরি দ্বারা ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারী ভাবে আঘাত করলে ভিকটিম ঘটনাস্থলে মারা যায়। পরে গ্রেফতারকৃত আসামি ও তার সহযোগী আসামিগন অটোরিক্সা নিয়ে যায়। তারা সদর থানাধীন দেশী পাড়া নামক স্থানে একটি গ্যারেজে অটোরিক্সাটি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রয় করে টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বন্টন করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, মূলত আসামিগন ভিকটিমের কাছ থেকে অটোরিক্সা ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে এ হত্যাকান্ডটি সংগঠিত করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১১ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে ভিকটিম সাকিবকে হত্যা কান্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে অন্যান্য আসামিসহ এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।