গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ি এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্মের ৫৬ ঘণ্টার মধ্যেই কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। গত ১৮ নভেম্বর রাতে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম গ্রহণের পর মঙ্গলবার সকালে শিশুটি স্বাসকস্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।
গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ি এলাকার একটি গলিতে অননুমোদীতভাবে গড়ে তুলা এসকিউআর মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড হসপিটাল লি: নামের হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
শিশুটির পিতা আনিছুর রহমান ও মাতা জমিলা। তারা গাজীপুর মহানগরীর বিআইডিসি এলাকার চাপুলিয়া এলাকার বাসিন্দা।
আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী জানান, জমিলার ডেলিভারীর প্রত্যাশিত তারিখ ছিল আগামী ৯ ডিসেম্বর। গত ১৮ নভেম্বর রাতে জমিলার পানি ভাঙ্গে। তারা চিকিৎসকের পরামর্শে রাত সোয়া ১১টায় ঐ বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। সেখানে রাত ১২টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনীর চিকিৎসক ডা: তমা কর্মকার সিজারিয়ান অপারেশন করেন।
তারা আরো জানান, অস্ত্রোপচার শেষে ডা. তমা কর্মকার ব্যবস্থাপত্র লিখে চলে যান। এর পর ডা. তমা আর হাসপাতালে আসেননি, নবজাতকেরও কোন খবর নেননি। নবজাতক বা শিশুরোগে অভিজ্ঞ কোন ডাক্তারও শিশুটির খবর নেয়নি। এরই মধ্যে সোমবার রাতে শিশুটি প্রচন্ড কান্না শুরু করলে কর্তব্যরত ডাক্তার ও স্টাফদের জানানো হয়। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
শিশুটির মা জমিলা জানান, শিশুটি জন্মের পর ঐ ক্লিনিকে কোন শিশু বিষয়ক ডাক্তার তার চিকিৎসা দেননি। সেখানে শিশু বিষয়ক কোন ডাক্তার নেই। সোমবার রাতে আমাদের বাচ্চা কোন খাবার খায়নি। সারারাত কান্নাকাটি করেছে। হাসপাতালের নার্সদের জানিয়েছি, তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সকালে হাসপাতালের এক কর্মচারী হেক্সিসল হাতে মেখে আমার বাচ্চার মুখে আঙ্গুল দিয়ে দেখেছে। পরে বলেছে কোন সমস্যা নেই।
তাদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে শিশুটি কান্নাকাটি বন্ধ করে দিলে ঐ হাসপাতালের কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে সেখানে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক শিশুটিকে পরীক্ষা করে সকাল ১০টায় মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যু সনদে শিশুটিকে ব্রড ডেথ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়া ইসলাম, স্থানীয় সাংবাদিকগণ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
এদিকে এঘটনার পর মঙ্গলবার দুপুরে রাজবাড়ি রোডস্থ শিববাড়ির একটি গলিতে নির্মাণাধীন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় কথিত ওই হাসপাতালে সরজমিনে গিয়ে একজন ডাক্তার, একজন নার্স ও একজন নার্স কাম ম্যানেজার ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি।
নবজাতকের মা জমিলা অভিযোগ করেন, আমার বাচ্চা সারারাত কেদেছে, কিছু খায়নি। কোন ডাক্তার তার চিকিৎসা করেনি। নার্সরা বলেছে, বুকে দুধ কম, দুধ আসলে ঠিক হয়ে যাবে। এখানে কোন অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই, কোন শিশুর ডাক্তার নেই। তারা আমাকে অন্য হাসপাতালে নিতেও বলেনি। তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতকালের ডাক্তার নার্সদের অবহেলায় আমার বাচ্চা মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই।
এবিষয়ে সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়া ইসলাম জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানার জন্য ডা: তমা কর্মকারের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন।
এব্যাপারে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ আজমি তুহিন বলেন, আমি সেবার জন্য এ হাসপাতাল করেছি। হাসপাতালে কোন অবহেলা হয়নি। শিশুটি এখানে নয়, তাজউদ্দীন মেডিকেলে নেয়ার পর মারা গেছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: খায়রুজ্জামান বলেন, এটি অবৈধ ক্লিনিক। এটিসহ শতাধিক হাসপাতাল বন্ধের জন্য আমরা ইতিমধ্যে ঢাকা ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দপ্তরে তালিকা দিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিলে আমরা সহযোগীতা করব। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।