গণবাণী ডট কম:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা সোমবার সকালে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি লাভের পর তিনি সোয়া ৯টার দিকে কারাগার থেকে বোনের সাথে বেরিয়ে আসেন।
তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার মো. শাহজাহান আহমেদ।
তিনি আরো জানান, জামিনের কাগজপত্র রোববারে কারাগারে পৌছায়। পরে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। সোমবার ভোরে তাকে কারাগার দেওয়া কথা তাকে জানানো হয়। কিন্তু সকালে স্বজন কারাগারে পৌছাতে দেরি হয়। পরে তার বোন চিশতিয়া কারাগারে পৌছালে ৯টার কিছু পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারাফটকে তার বোন চিশতিয়া তাকে রিসিভ করেন। খাদিজাতুল কুবরা মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বোনের সাথে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
মুক্তির পর খাদিজা কাশিমপুর কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে, পুরোটাই অন্যায়। বিনা দোষে আমি প্রায় ১৫ মাস জেল খাটলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু আর এখন বলতে চাই না। বলার মতো মন-মানসিকতা আমার নেই।
তিনি আরো বলেন, কারাগারের ভেতরে খুব বেশি ভালো ছিলাম না। নামাজ পড়ে, রোজা রেখে আর লেখাপড়া করে সময় কাটিয়েছি। আজকে আমার স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। তাই এখান থেকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব।
কারাগার ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজাতুল কোবরা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর নিউ মার্কেট ও কলাবাগান থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ।
নিউ মার্কেট থানায় এসআই খাইরুল ইসলাম একটি মামলা করেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, খাদিজাতুল কোবরা ও দেলোয়ার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনগড়া, বানোয়াট, মিথ্যা, মানহানিকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। আসামিরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের প্রয়াস চালাচ্ছেন।
নিউ মার্কেট থানায় মামলা করার আট দিনের মাথায় কলাবাগান থানায় আরেকটি মামলা করেন এসআই আরিফ হোসেন। এ মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর রাত ৯টা ১৫ মিনিটে মোবাইলফোনে ইউটিউব দেখার সময় দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেল দেখতে পান।
পুলিশ তদন্ত শেষে দুই মামলায় গত বছরের মে মাসে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঐ দুই মামলায় বিচারিক আদালতে দুবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন চেম্বার আদালত।পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। পরে খাদিজার পক্ষে তার আইনজীবি চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। যা গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। আপিল বিভাগ আবেদন শুনানি চার মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন। পরে গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় খাদিজাতুল কুবরার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে খাদিজার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট বি এম ইলিয়াস।