গণবাণী ডট কম:
আজ রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। দুর্গম এলাকার কেন্দ্রগুলোর ব্যালট পেপারও গতকাল রাতে পৌঁছে গেছে স্ব স্ব কেন্দ্রে। বাকী কেন্দ্রগুলোর ব্যালট পৌঁছেছে আজ ভোরে। ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে আজ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নওগাঁ-২ আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিজয় আগেই নিশ্চিত হলেও সারাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কমতি নেই।
নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিসহ ১৬টি দল নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে রয়েছে। বেশকিছু জায়গায় ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ভোট ঠেকাতে হরতাল ডেকেছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। বাস-ট্রেনে আগুনে ঘটেছে মানুষের প্রাণহানি। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বেশকিছু যানবাহন ও স্থাপনা পুড়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রও রয়েছে। সব মিলিয়ে জনমনে আতঙ্ক। ভোটের আগেই ঢাকা শহরে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। নির্বাচনে শঙ্কা-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি নির্বাচনী আমেজও রয়েছে। যদিও ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত ইসি। যে কোন ধরণের নাশকতা মোকাবেলায় ভোটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
শেষ মুহূর্তে ভোটের আগের দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের মুখোমুখী হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা- ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু আমরা যেভাবে বলি, সেভাবে নির্বাচন সবসময় শান্তিপূর্ণ হয় না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উঠিয়ে আনা কঠিন হবে। তিনি আরও বলেন, ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যারা হরতাল দিয়েছে, তারাও বলেছিল তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে ভোটারদের ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে। কিন্তু আগুন দেখে আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত। কোনো দল যদি এটি করে থাকে, এটি অমার্জনীয় অপরাধ।
একদিকে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ভোটকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করানোসহ নানা কৌশল নিয়েছে। এক তৃতীয়াংশ আসনে আওয়ামী লীগের এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার আভাস দিয়েছেন। ফলে শতাধিক আসনে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেক স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতিমধ্যেই সন্দেহ পোষণ করে আসছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পরে তৃতীয়বারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যেই ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা ভোটে জয় নিশ্চিত করেন। বাকী আসনগুলোতে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৪০ ভাগের বেশি। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রায় সবগুলো দল অংশ নিলেও নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮০ ভাগ। যদিও ভোটার উপস্থিতির হার নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবার অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দেওয়া হলেও বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি থাকলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা যাবে।
নির্বাচন উপলক্ষে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটে নিয়োজিত থাকবেন। দেশজুড়ে টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি এবং র্যা্ ব সদস্যরা। ভোট ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় জিরো টলারেন্সে দেখানোর বার্তা পেয়েছে মাঠে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা বলছেন, এবারের ভোটে দুইদিকে নজর রাখতে হচ্ছে তাদের। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ রক্ষা করার পাশাপাশি ভোটারের নিরাপত্তার দিক দেখতে হচ্ছে। এর বাইরে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট ঠেকানোর ঘোষণার পর নাশকতা প্রতিরোধেও কাজ করতে হচ্ছে। গত দুইদিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে আগুন এবং রাজধানীতে ট্রেনে নাশকতার পর নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও কঠোর করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী বাদে আনসার ও ভিডিপি, র্যা্ ব, বিজিবি সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে আছেন। এর মধ্যে ৬২ জেলায় ৩৮ হাজার ১৫৪ জন সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাকী দুই জেলা ভোলা ও কক্সবাজারে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্য মোতায়েন থাকবে। নৌবাহিনীর সদস্য ২ হাজার ৮২৭জন এবং কোস্ট গার্ডের সংখ্যা ২ হাজার ৫২০জন। নির্বাচনে বিজিবির ৪৫ হাজার ১৮৫জন সদস্য মাঠে থাকবেন। পুলিশের সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার জন। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৭২জন। আর মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে থাকবে ৫৫ হাজার ৯২৮জন। ভোটে আনসার সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০জন। এর মধ্যে কেন্দ্রে থাকবে আনসার সদস্য ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮জন। মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে থাকবে ৪৪ হাজার ২১২ জন। এলিট ফোর্স র্যা্ বের ৬০০টি টিমের পাশাপাশি রিজার্ভ ৯৫টি টিম রাখা হয়েছে। এসব টিমের আওতায় ১১ হাজার ৭৭৭জন র্যা্ ব সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। একইসঙ্গে প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন।
৬৪জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯০জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রায় ৩ হাজার নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে আছেন। বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। নির্বাচনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ নির্বাচনে আসনপ্রতি ৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন উপলক্ষে ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন (মোটরসাইকেলসহ), দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ২২ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করেছে কমিশন।
ভোটে প্রার্থী ১৯৬৯, স্বতন্ত্র ৪৩৭: এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে ৩ জন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় দলটির প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৫ জন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি-জাপার ২৬৪ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জনসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৫৩২ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন আরও ৪৩৭ জন। ফলে ১ হাজার ৯৬৯ জনের নাম থাকবে ব্যালট পেপারে। যদিও জাপাসহ বেশ কয়েকটি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে উচ্চ আদালতের আদেশে এবার ৭৭জন প্রার্থিতা ফিরে পান।
ভোটার, ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ সংখ্যা: ২৯৯টি আসনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯জন। মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি, ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮টি। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৪৮জন।
রেকর্ড সংখ্যক শোকজ, মামলা ৬১ জনের নামে: নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থীকে শোকজ করা হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় বেপরোয়া ছিলো প্রার্থী-সমর্থকরা। বিধিলঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি ৭২০জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে গ্রহণ করে। এর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ ৬১জনের নামে মামলা করেছে ইসি।
কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল, সকালে যাবে ব্যালট পেপার: এবারের নির্বাচনে মোট ৪২ হাজার ২৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্গম ২ হাজার ৯৭১ কেন্দ্রে গতকালই ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আজ সকাল ৬টা থেকে ৩৯ হাজার ৫৩টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে। ব্যালট পেপার পরিবহন ও বিতরণে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের হাতে নির্বাচনী সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
দেশি পর্যবেক্ষক ২০ হাজার ৭৭৩ জন, বিদেশি পর্যবেক্ষক ১৫৮জন: দেশি পর্যবেক্ষক হিসাবে ২০ হাজার ৭৭৩ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে করবেন ৫১৭জন এবং মাঠ পর্যায়ে ২০ হাজার ২৫৬জন। বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসাবে ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন ১৫৮জন। এর মধ্যে স্বউদ্যোগে ১২৬জন এবং আমন্ত্রিত ৩২জন। বিদেশি সাংবাদিক এসেছেন ৭৬জন। যার অধিকাংশই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশনার ও তাদের প্রতিনিধি হিসাবে এসেছেন ১৮জন।
নির্বাচনী অ্যাপে ঘরে বসেই ভোটার নম্বর, মিলবে কেন্দ্রের তথ্যও: ভোটার, প্রার্থী ও নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্যের নিশ্চয়তা দিতে ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ চালু করেছে ইসি। এতে ভোটার নম্বর, কেন্দ্রের নাম ও লোকেশন, ভোট পড়ার হার, প্রার্থীদের হলফনামাসহ নির্বাচনের বিভিন্ন তুলনামূলক চিত্র ঘরে বসেই জেনে নিতে পারবেন সবাই। অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল উভয় প্লে স্টোর থেকেই অ্যাপটি পেয়ে যাবেন।
বিএনপি অংশ নিলে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হতো-সিইসি
বিএনপি অংশ নিলে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হতো বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। শনিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন কথা বলেন। কত শতাংশ ভোট পড়লে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, এটি বলা কঠিন। কত ভোট পড়লে আমি খুশি হবো, এ বিষয়ে এখন কথা বলা কঠিন। তবে ১ শতাংশ ভোট পড়লেই নির্বাচন হয়ে যাবে। কত শতাংশ পড়লে একটা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।
রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনে যে আগুন দেওয়া হয়েছে, সেটিকে অমার্জনীয় অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, চলন্ত ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে, এতে চার থেকে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এই বেদনাদায়ক দৃশ্য অবলোকন করতে হয়েছে। কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে, তা আমরা জানি না। দেশে হরতাল-অবরোধ চলছে। এতে এই হরতালের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে মিল খুঁজতে পারেন। এটা সত্য কিংবা মিথ্যা হতে পারে। সিইসি আরও বলেন, যেকোনো অগ্নিকাণ্ড গুরুতর অপরাধ। রাজনীতিতে মতভেদ থাকলে সংলাপ ও আলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। তবে সেটি নির্বাচন কমিশনের কাজ না। আগুন ও হতাহতের ঘটনায় আমরা বেদনাহত, এ ধরনের ঘটনা ঘটানো উচিত না, এটি কোনো রাজনৈতিক দল করলে তা অমার্জনীয় অপরাধ।
ক্ষমতায় কারা আসছে এটা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। এমন একটি নির্বাচন আপনাদেরকে বিব্রত করে কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়। এটা রাজনৈতিক ইস্যু। নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই।
কতটা নিয়ন্ত্রিত হবে সেটা ভবিষ্যত বলবে: নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলকে আনতে পারেননি। আপনারা ইভিএম ও সিসিটিভি চেয়েও পাননি, এমন অবস্থায় নির্বাচনকে কতটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতটা নিয়ন্ত্রিত হবে সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনার ক্ষেত্রে কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে। এই বাস্তবতাটা অস্বীকার করছি না।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এই নির্বাচনকে প্রকৃত অর্থে নির্বাচন না বলে এক ধরনের সিলেকশন বলে আখ্যা দিচ্ছেন, আপনারা কী মনে করছেন? জবাবে সিইসি বলেন, অনেকে সিলেকশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয়, আরও কিছু ব্যক্ত করেছেন। তারা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বিশেষণগুলো দিয়েছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি-আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা। রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িত হওয়া আমাদের কাজ না। তা হচ্ছিও না। আমরা নির্বাচনটাকে নির্বাচনের মতো করে করতে যাচ্ছি। যেসব বিতর্ক বলা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকবে। এর সুরাহা রাজনীতিবিদরা এক সময় করবেন। আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে অনুগ্রহ করে সহযোগিতা করবেন। গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে সিইসি বলেন, গ্রহণযোগ্যতার কোনও সুস্পষ্ট মানদণ্ড নেই। এটা একটি আপেক্ষিক বিষয়। কেউ বলবেন গ্রহণযোগ্য হয়েছে, কেউ বলবেন হয়নি।
মার্কিন ভিসানীতির বিষয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে। কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে। যারা এক্ষেত্রে বাধা তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবে। আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ, এটা আমাদের বিষয় নয়। ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী-তা আমি বুঝি না। এটা বোঝে পররাষ্ট্র দপ্তর।
খবর : দৈনিক ইত্তেফাক।