গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা এলাকায় মার্বেল খেলা নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে এক কিশোরকে হত্যার ৫ মাসের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নিহত কিশোরের নাম বকুল (১৪)। সে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন ভোগড়া মধ্যপাড়া এলাকার আবুল কালামের বাড়ীর ভাড়াটিয়া সাজ্জাদ মিয়ার ছেলে।
গ্রেফতার আসামীর নাম রাসেল আহমেদ সোয়াদ (২১)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন টেকনগপাড়া এলাকার মো: সেলিম মিয়ার ছেলে।
আসামী সোয়াদকে গত ১০ জানুয়ারি নিজ বাসা থেকে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে ২ দিনের রিমান্ডে এনে জিগ্যাসাবাদ করার পর আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হলে সোয়াদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দেয়। এতে সে হত্যার কারণ, আর কারা জড়িত ও ঘটনার বিবরণ প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন, ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম।
তিনি আরো জানান, নিহত বকুলের পিতা পেশায় রিক্সা চালক। মা মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় ভ্যালমন্ড ফ্যাশনে সুইং অপারেটর হিসাবে চাকরি করেন। তারা গত বছরের ২৪ জুলাই কাজ শেষে বাড়ী ফিরে বিকালে বড় ছেলে বকুল (১৪) কে বাসায় এসে পায়নি। রাত গভীর হওয়ার পরও বকুল বাসায় ফিরে না আসায় আশপাশের বাসাসহ বাদীর নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের বাসায় খোঁজাখুজি করেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পরের দিন ২৫ জুলাই সকালে প্রতিবেশী মোসাঃ ফরিদা বেগম তাদের জানায়, বাসন থানাধীন ভোগড়া পেয়ারা বাগান সাকিনস্থ বালুর মাঠ সংলগ্ন জনৈক মোঃ সিদ্দিকের পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরের ভেতরে ১৪/১৫ বছরের একটি ছেলের মরদেহ পড়ে আছে। পরে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহটি দেখে তাদের ছেলে বকুলেল মৃতদেহ বলে সনাক্ত করেন। খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বকুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহের ডান চোঁখের উপরে কালো ও ছোলা জখমের চিহ্ন এবং নাক দিয়ে রক্ত নির্গত হওয়ার চিহ্ন দেখা যায়।
পরে এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে বাসন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামরায় বলা হয়, গত ২৪ জুলাই সকাল থেকে ২৫ জুলাই সকাল অনুমান ৯টার মধ্যে যে কোনো সময় অজ্ঞাতনামা খুনি/খুনিরা অজ্ঞাত কারণে বাদীর ছেলেকে হত্যা করে মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে বকুলের মৃতদেহ ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, বাসন থানা পুলিশ তদন্ত করে মামলার রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স মামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই করে রাসেল আহম্মেদ সোয়াদকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তিনি হত্যার কারণ ও জড়িতদের নাম জানায়। তিনি জানান, সোয়াদ বাসন থানাধীন বালু মাঠের কোনায় চা-স্টলে চা খাওয়ার সময় তাঁর পরিচিত একই এলাকার ছোট ভাই বকুল ও নাঈম বালুর মাঠে বাজিতে মার্বেল খেলছিলো। খেলা নিয়ে নাঈম আর বকুল ঝগড়া ও মারামারি করে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে বকুল নাঈমকে চড় থাপ্পর ও জোরে ধাক্কা মারে। এতে নাঈম মাটিতে পড়ে যায়। ঝগড়া দেখে এলাকার এক বড় ভাই উভয়কে ফিরিয়ে দেয়। নাঈম রাগ করে সেখান থেকে চলে যায়। পরে বিকালে গ্রেফতার সোয়াদ, নাঈম, নাজমুল ও তার এক বন্ধু একসাথে আড্ডা দেয় এবং গাঁজা সেবন করে। এসময় বকুল এর বিরূদ্ধে নাঈম নাজমুলের কাছে নালিশ দেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, নালিশের রেশ ধরে আসামীরা বকুলকে ধরে এনে বালুর মাঠের দক্ষিণে একদম শেষ কর্ণারের টিনের ঘরের ভেতরে বকুলের হাত, পা ও মুখ আটকে রাখে। পরে রাত ৯টার দিকে তারা বকুলকে স্বাসরোধে হত্য করে। এসময় নাঈম বকুলকে লাথি ঘুষি মারে। নাজমুলও কয়েকটি লাথি ঘুষি মারে। সোয়াদ নিজেও হুজুগে কয়েকটা লাথি, ঘুষি মারে। সোয়াদ বকুলের পা চেপে ধরে। নাজমুলের একটি ঘুষি বকুলের ডান চোখের উপরে লাগলে চোখ ফুলে যায়। নাজমুল ও নাঈমদের ঘুষিতে বকুলের নাক ফেটে রক্ত বের হয়। নাঈম বকুলের গলা মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায়ে ৪/৫ মিনিট পরে বকুল নিস্তেজ হয়ে যায়। বকুল মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে সোয়াদ বকুলের ডান পায়ে, নাঈম বাম পায়ে, নাজমুল বকুলের মাথার নীচে এক হাতে, আরেক হাতে বাম হাত এবং অপর একজন বকুলের ডান হাতে ধরে মরদেহ পাশের ফ্যাক্টরীর জমানো পানিতে ফেলে দেয়। পরে সকলেই যার যার বাসায় চলে যায়।