নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর):
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বীর উজলীর আমতলী এলাকার ইস্পাহানি চা কোম্পানির আঞ্চলিক ডিপো থেকে কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন মালামাল লুটের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনায় জড়িত মূলহোতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে শনিবার গাজীপুর আদালতে প্রেরণ করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট থেকে নগদ ২৫ লাখ টাকা, ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯ শত টাকার মালামাল এবং চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার বাদী ইস্পাহানি চা কোম্পানির কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সিনিয়র ডিভিশনাল ম্যানেজার এস এম ইনছানুল হক।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, মুলহোতা কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার হৃদয়পুর গ্রামের মৃত দৌলত হোসেনের ছেলে ও ডিপো ইনচার্জ শামীম আল মামুন (৩১), ভ্যানগাড়ী চালক ও কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার আমলা সদরপুর গ্রামের মহির উদ্দিনের ছেলে সালমান আহমেদ (২২), গোপালগঞ্জ সদরের রুবেল আহমেদ (৩৩), কুষ্টিয়া দৌলতপুরের পাভেল ইসলাম মেহেদী (৩২), বগুড়া শিবগঞ্জের হোসেন মন্ডল (৩৫), রাজশাহী গোদাগাড়ির আহসান হাবিব (৪৪)।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুবকর মিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের কিশোরগঞ্জ ডিভিশনের অধীনে কাপাসিয়া থানাধীন টোক ইউনিয়নের আমতলী সাকিনের ফাইজদ্দীনের বাড়ীতে গোডাউন ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছিল। আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ব্যবসা সম্প্রসারনের লক্ষে মালামাল মজুদ করার জন্য একই গ্রামের আমিনুল ইসলামের বাড়ীতে ভিন্ন একটি গোডাউন ভাড়া করা হয়। কোম্পানীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে লোকাল ডিপো ও ডিভিশনাল ডিপোর মালামাল সংরক্ষণ ও তদারকীর জন্য শামীম আল মামুন ও সালমান আহমেদ দায়িত্বে দেয়া হয়। ২টি গোডাউনে ইস্পাহানি লিমিটেডের বিভিন্ন মালামাল মজুদ করে চাবি শামীম আল মামুনের নিকট বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরে জরুরী প্রয়োজনে গত ২ মার্চ মোঃ শামীম আল মামুনকে মোবাইল ফোনে কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন মামলার বাদী গোডাউনের সামনে গিয়ে গোডাউন তালাবদ্ধ দেখতে পান। তখন সালমান আহমেদের কাছে মোঃ শামীম আল মামুনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, সে জানায় মোঃ শামীম আল মামুন ২৯ ফেব্রুয়ারি ইস্পাহানির লোগো ব্যাতিত অন্য ১টি পিকআপে এবং ১ মার্চ অন্য ২টি পিকআপ গাড়ীতে করে গোযাউনের মালামাল নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় গোডাউন দুইটির চাবি সালমান আহমেদের কাছে রেখে গেছে।
মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়েছে, আসামীরা পরস্পরের যোগসাজশে ও সহায়তায় ইস্পাহানি কোম্পানির গোডাউন থেকে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে ১ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে কোন সময় বিভিন্ন রকমের চা পাতা, চাউল, ফুডস, ইস্পি ড্রিংকস পাউডারসহ ৯৩ লাখ ৮৮ হাজার ১০ টাকার বিভিন্ন মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে তারা গত এক সপ্তাহ যাবত পলাতক ছিলেন। থানায় মামলা দায়ের করার পর পুলিশ ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে পৃথক অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার ও চুরি যাওয়া আংশিক মালামাল ও চুরির মাল বিক্রির নগদ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
এ ব্যাপারে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর মিয়া বলেন, কাপাসিয়া থানাধীন দুটি ডিপুতে মালামাল সংরক্ষণ করে ইস্পাহানী কোম্পানীর পণ্য বাজারজাত করা হতো। সেই ডিপুর ইনচার্জ শামীম আল মামুনসহ অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় ডিপো থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে গত ৫ মার্চ থানায় মামলা হওয়ার পর আমরা গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারের সময় আসামিদের নিকট থেকে চুরি করা বিভিন্ন ইস্পাহানি কোম্পানির পণ্য উদ্ধার করা হয়। এই অপরাধের মূল হোতা শামীম আল মামুনের তথ্য মতে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে নগদ ২৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।