গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ জেনেও বাংলাদেশ সীমান্তের ভিতরে ঢুকে ইলিশ শিকার করতে থাকা কয়েকজন ভারতীয় জেলেকে আটকের সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় বর্ডার ফোর্স (বিএসএফ) সদস্যদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। বাংলাদেশের রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা সদরের বালুঘাট এলাকার পদ্মা ও শাখা বড়াল নদীর মোহনায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এক বিএসএফ সদস্য নিহত এবং অন্য এক সদস্য হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের।
তবে, বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কয়েকজন জেলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নদীতে মাছ ধরলে বিজিবি তাদের চ্যালেঞ্জ করে। পরে জানা যায়, জেলেরা ভারতীয় এবং তাদের মধ্যে একজন বিএসএফ সদস্য রয়েছে। তখন বিজিবি তাদের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দেয়ার কথা বল্লে ঐ জেলেরা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে এবং বিজিবিকে লক্ষ করে গুলি করে। তখন বিজিবি পাল্টা গুলি করে।
এদিকে বিজিবি রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক মেজর আসিফ বুলবুল সাংবাদিকদের কাছে বিজিবি-বিএসএফ গুলি বিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে আটক জেলের নাম প্রকাশ করেননি এবং বিএসএফ সদস্য হতাহতের বিষয়ে কিছুই বলেননি। এছাড়া কত রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে তাও বলতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে মেজর আসিফ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন ভারতীয় জেলে বিজিবি’র হাতে আটক রয়েছেন। শুনেছি গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। বিকালে দুই বাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক ডাকা হয়েছে। পতাকা বৈঠকের পরই বিস্তারিত বলা যাবে।’
চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রজনন মৌসুমের জন্য পদ্মায় ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ অবস্থায় জেলেরা যেন পদ্মায় ইলিশ শিকার করতে না পারে, সে জন্য বিজিবি সদস্যদের নিয়ে তারা বৃহস্পতিবার সকালে অভিযানে যান। এসময় তারা দেখেন, পদ্মা-বড়ালের মোহনায় বাংলাদেশ সীমানার অভ্যন্তরে একটি নৌকায় করে কয়েকজন ইলিশ শিকার করছে। তিনি আরও বলেন, তারা কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারেন, ওই জেলেরা ভারতীয়। এসময় তারা ওই জেলেদের আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় দুইজন জেলে নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে পালিয়ে যান। ফলে তারা নৌকাসহ একজনকে আটক করতে সক্ষম হন। এ সময় পালিয়ে যাওয়া জেলেরা গিয়ে বিএসএফকে বিষয়টি অবহিত করে। খবর পেয়ে বিএসএফ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেই গালাগালি শুরু করেন। বিজিবি সদস্যরা প্রতিবাদ করলে বিএসএফ সদস্যরা গুলিবর্ষণ করে। তখন আত্মরক্ষার্থে বিজিবির পক্ষ থেকেও পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হন। পরে তারা একজন ভারতীয় জেলে এবং তার নৌকা আটক করে বিজিবির চারঘাট করিডর সীমান্ত ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন।
এব্যাপারে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একটি৫ বেসরকারী টেলিভিশনকে বলেন, আপনারা জানেন আমাদের নদীতে ইলিশ মাছ ধরা নিষেধ রয়েছে এবং নদীতে জেলেদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের বিজিবি হঠাৎ করে দেখতে পায় নদীতে কয়েকজন জেলে মাছ ধরছে। বিজিবি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলে জানতে পারে যে তারা ভারতীয় নাগরিক। ওই জেলেরা আমাদের প্রায় ৫/৬শ গজ ভেতরে চলে আসছিল। মাছ ধরা জেলেদের মধ্যে একজন বিএসএফ সদস্য রয়েছে। তখন বিজিবি জানায়, যেহেতু আপনারা আমাদের সীমানায় ঢুকে পড়েছেন, তাই আপনাদেরকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দিব। এ সময় বিএসএফ সদস্য ও জেলেরা স্পিডবোট যুগে পালানোর চেষ্টা করে এবং বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে। পরে বিজিবি পাল্টা গুলি করে। পরে জানা যায় এ ঘটনায় একজন নিহত এবং অপর একজন আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, এটি একটি অনাহুত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ভারতের সাথে আমাদের অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে সাধারণত আমরা পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি। কিন্তু উক্ত জেলেদের বলার পরও তারা যখন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তখনই এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বিএসএফ ও বিজিবি পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার নিরসন হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে ইলিশষ ধরা নিষেধ রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশী জেলেরা ইলিশ শিকার করায় চলতি মৌসুমে অর্ধশত জেলে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কথা জেনেও ভারতীয় জেলেরা প্রায়শই বাংলাদেশ ভূখন্ডে প্রবেশ করে ইলিশ শিকার করে বলে স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ।