কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সসহ বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শত শত একর কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইট ভাটায় ফসলি জমি ও এলাকার ছোট বড় টেক টিলা কেটে মাটি নিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ইট। অনেক সময় জোর জবরদস্তি করে ফসলি জমির মাটি কেটে নিলেও প্রভাবশালী মহলের ভয়ে সাধারণ কৃষকরা মুখ খুলতে পারছে না। নিয়ম নীতি না মেনে অবৈধ এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে ব্যাপক বায়ু দূষণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অপরদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।
জানা যায়, ইটভাটা চালু করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইলেন্স নিতে হয়। এছাড়া গত ২০ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রচারিত ‘ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত’গণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকার ইট প্রস্তুত কার্যক্রমকে পরিবেশ সম্মতভাবে পচিালনার লক্ষে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) জারি ও কার্যকর করেছে। উক্ত আইনে নিম্নরূপ বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত/পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসককর্তৃক ইস্যুকৃত লাইসেন্স ব্যতিত কোনো ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারবেন না। আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা; সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর; সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি; কৃষিজমি; প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে ন্যূনতম এক কি.মি. দূরত্বের মধ্যে; সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কি.মি. দূরত্বের মধ্যে; বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে এক কি.মি. দূরত্বের মধ্যেও ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটার মালিকরা এ আইন ও নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কাই করছেন না। কাপাসিয়া উপজেলায় প্রায় ৩৪ টি ইটভাটা রয়েছে। উপজেলার কাপাসিয়া সদর, দুর্গাপুর, তরগাঁও, কড়িহাতা, সনমানিয়া, ঘাগটিয়া, রায়েদ, সিংহশ্রী ও টোক ইউনিয়নে রয়েছে এসব অবৈধ ইটভাটা। ইটভাটার মালিকরা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা তৈরী করছেন। তাছাড়া বনাঞ্চলের পাশে, লোকালয়, হাট বাজার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেও গড়ে উঠেছে বহু ইটভাটা। নদীর তীর দখল করেও অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। শত শত ড্রাম ট্রাক ও অবৈধ ট্রলি গাড়ি দিয়ে অনবরত ফসলি জমি ও টিলা কেটে মাটি এনে ইটভাটায় ইট তৈরী করা হচ্ছে। এতে করে এলাকার কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ দুষিত হচ্ছে ও স্থানীয় রাস্তা ঘাটের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক ইট ভাটায় গাছপালা কেটে লাকরি পুড়িয়ে কালো ধুয়া তৈরির ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে সর্দি কাশিসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পরিবেশ দূষণের কারণে এলাকার নানা ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। ইট ভাটার আশ পাশ এলাকায় নারকেল, সুপারী, কলা, ইক্ষুসহ নানান ফলজ গাছের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান।
এব্যাপারে কাপাসিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো: মোশারফ হোসেন বলেন, সকল ইটভাটার সঠিক কাগজপত্র নেই। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছি, তাই আমাদের এবছরটা সুযোগ দেয়া হোক যাতে আগামীতে সবকিছু ঠিক করে নিতে পারি।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, নিয়ম নীতি না মেনে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা চিহ্নিত করে সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হবে।