গণবাণী ডট কম:
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার ইমেরিটাস স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। এরপর সেখানেই তার জানাজা সম্পন্ন হবে। ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ মুসা এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মরণে আজ রবিবার বেলা দুইটা থেকে মহাখালীস্থ প্রধান কার্যালয় ব্র্যাক সেন্টারে একটি শোকবই খোলা হবে। এছাড়া আড়ং, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামীকাল সোমবার এবং সারাদেশে ব্র্যাকের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শোকবই খোলা থাকবে। শোকবই থাকবে ৩০ জানুয়ারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
অন্যদিকে ব্র্যাকের স্বপ্নদ্রষ্টা স্যার আবেদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্টজনেরা। শুক্রবারই স্যার আবেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখেছেন। তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তায় বলেন, ফজলে হাসান আবেদের মতো মানবতাবাদী মানুষের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক তার শোকবার্তায় তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানান।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবন মানবতার জন্য এক বিরাট উপহার। ব্র্যাকে ৫০ বছরের নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ও তার বাইরে কোটি মানুষের জীবন আমূল বদলে দিয়েছেন। একই সঙ্গে উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বের ভাবনাকেও তিনি বদলে দিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, তার কর্মের বিপুল বিস্তৃতি ও প্রভাব এবং যে পরিপূর্ণ বিনয় সহকারে কাজগুলো তিনি সম্পন্ন করেছেন, উভয়ই আমাদের শিক্ষার নিবিড় পাথেয় হয়ে থাকবে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস বলেছেন, স্যার আবেদ ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রত্যাগত শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ১০ হাজার ৪০০ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আরো অর্থ সংগ্রহ করে তিনি ১৬ হাজার ঘর করেছিলেন। তার পরও কিছু অর্থ উদ্বৃত্ত থেকে গিয়েছিল যা দিয়ে পরের প্রকল্প শুরু করেছিলেন। তিনি এমনই এক মহত্ মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রয়োজনকে বিস্মৃত না হয়ে কীভাবে বৃহত্ ও কার্যকর সংগঠন গড়ে তুলতে হয়। তার কাজ আমাদের চিরকালীন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিত্ ব্যানার্জী এবং এস্তার দুফলো বলেছেন, ফজলে আবেদের মতো মানুষ কয়টা হয়? তার অনবস্থানে আমরা সবাই একটু ছোটো হয়ে গেলাম।
ব্র্যাক বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ অসাধারণ দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার গভীর জীবনদর্শন ও নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান এক শোকবার্তায় বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে দরিদ্রবান্ধব বেসরকারি উন্নয়নে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রাণপুরুষ। বিশ্ব তাকে উন্নয়নক্ষেত্রে বহুমাত্রিক এবং ব্যয়সাশ্রয়ী অনেক সমাধান উদ্ভাবনের জন্য মনে রাখবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্যার ফজলে আবেদ ছিলেন শ্রেষ্ঠতম সামাজিক উদ্ভাবকদের একজন।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেছেন, দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার ১০টি দেশে ব্র্যাকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়ে তিনি আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আরো শোকবার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ, বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক এবং পরিচালনা পর্ষদ, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তোমু হোজুমি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অশোকার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল ড্রেইটন, পুলিত্জার পুরস্কারপ্রাপ্ত কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টফ, যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক সহায়তা বিভাগ (ডিএফআইডি), অস্ট্রেলীয় সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (ডিএফএটি), সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউকের প্রধান নির্বাহী কেভিন ওয়াটকিনস, বিওপি হাব, ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিম, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী সাইদা রশীদ, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) সাহুল আফজাল চৌধুরী, ব্রিটিশ রেড ক্রসের সোফেনা লালানি, ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষক জিবাহ নোয়াকো, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সাজিদা ফাউন্ডেশন, জাগো ফাউন্ডেশন, ড. চঞ্চল খান, কামরুল মুরাদ প্রমুখ।
স্যার আবেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে দায়িত্বরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও। ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্সন ডিকসন টুইট বার্তায় বলেন, শুনে খুবই খারাপ লাগছে যে, ফজলে হাসান আবেদ আর আমাদের মাঝে নেই। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো তার টুইট বার্তায় বলেন, ফজলে হাসান আবেদের শোকাহত পরিবার এবং তার বৃহত্তর পরিবার ব্র্যাক ওয়ার্ল্ডের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান।