গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশের অন্যতম গুণী অভিনেতা ও গাজীপুরের কৃতী সন্তান আহমেদ রুবেল ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে —- রাজেউন)। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিনে যাওয়ার পথে হঠাত অসুস্থবোধ করলে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিচালক নুরুল আলম আতিক গণমাধ্যমকে এ অভিনেতার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি গণমাধ্যমকে আরো জানান, বুধবার সন্ধ্যায় আহমেদ রুবেল অভিনীত ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী ছিল। ছবির প্রদর্শনীতে যোগ দিতে উত্তরা থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন তিনি। গাড়ি থেকে নামার সময়ই অসুস্থতা অনুভব করেন তিনি। এরপর হেঁটে এগোতে থাকলে কিছুক্ষণ পরই অচেতন হয়ে নিচে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুকালে আহমেদ রুবেলের বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
টিভি নাটকের আগেই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় আহমেদ রুবেলের। ১৯৯৩ সালে উত্তম আকাশের পরিচালনায় ‘আখেরী হামলা’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় কাজ শুরু করেন তিনি।
দেশের অভিনয় অঙ্গনে সাবলীল অভিনয় করে যে কজন অভিনেতা দর্শকের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন, আহমেদ রুবেল তাদের মধ্যে অন্যতম। মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয় শুরু, এরপর টিভি নাটক এবং পরে চলচ্চিত্রেও অভিনয় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন ছিল না আহমেদ রুবেলের, বরং হতে চেয়েছিলেন একজন রাজনীতিবিদ।
ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ জানান, আহমেদ রুবেল তিন দশকের বেশি সময় ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে তিনি ‘কির্ত্তন খোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘হাদহদাই’, ‘একাত্তরের পালা’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ ও ‘বনপাংশুলে’র মত কালজয়ী নাটকে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘদেহী এ অভিনেতার কম্ভুকণ্ঠ চিরকাল দর্শকের স্মৃতিতে অম্লান থাকবে। তার মৃত্যুতে ঢাকা থিয়েটার গভীরভাবে শোকাহত।
এসময় তিনি আরও জানান, প্রয়াত অভিনেতা আহমেদ রুবেলের মরদেহ আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে নেওয়া হবে। সেখানে তার মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন সর্বস্তরের মানুষ। ঢাকা থিয়েটারের উদ্যোগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ আনুষ্ঠানিকতা চলবে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। পরে তার মরদেহ নিজ এলাকা গাজীপুরে নেওয়া হবে। গাজীপুর রাজবাড়ী মাঠে বাদ আছর জানাজার নামাজ শেষে গাজীপুর গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
শুরুর দিকে নিজের জন্মস্থান গাজীপুরে নাট্যদল গঠন করে অনেককে নিয়ে নাট্যচর্চা শুরু করেন। নাট্যকার সেলিম আল দীনের সহায়তায় গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন এ অভিনেতা। এরপর তাকে পেয়ে বসে অভিনেতা হবার অদম্য বাসনা।
এইচএসসি শেষ করার পর গাজীপুরের আঞ্চলিক পরিমণ্ডল থেকে ঢাকায় এসে ‘ঢাকা থিয়েটার’-এর সঙ্গে যুক্ত হন। শুরু হয় পেশাদারি নাট্যচর্চর পাঠ। এখানে এসেই তিনি সেলিম আল দীন, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, আফজাল হোসেন, হুমায়ূন ফরিদীর মতো অভিনয় কিংবদন্তীদের সাহচর্য পান।
টিভি নাটকের আগেই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় আহমেদ রুবেলের। যদিও বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত অভিনয়শিল্পী ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালে উত্তম আকাশের পরিচালনায় আখেরী হামলা সিনেমা দিয়ে বড়পর্দায় কাজ শুরু করেন তিনি।
প্রথম সিনেমা ব্যবসাসফল হওয়ায় একই পরিচালকের আরও দুটি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। এভাবে প্রায় একডজন সিনেমায় অভিনয় করেন ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। এরপর সিনেমা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি।
কিছুদিন বিরতি নিয়ে ২০০০ সাল থেকে টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করেন আহমেদ রুবেল। একক ও ধারাবাহিক মিলিয়ে ৫০০-এর বেশি নাটকে তিনি অভিনয় করেন।
তবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর দিয়ে সিনেমায় ফিরে সিনেমায় অভিনয়ের ধারা পরিবর্তন করেন প্রখ্যাত এ অভিনেতা। এরপর কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের চন্দ্রকথা, নুরুল আলম আতিকের পেয়ারার সুবাস ইত্যাদি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।