গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারি তাবলিগ জামাতের মুসল্লীরা অংশ গ্রহণ করছেন। আজ বাদ ফজর আম বয়ান করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি ভারতের দিল্লীর মুফতী উসমান আলী এবং বাংলাদেশের মুফতি আব্দুল্লাহ মুনসুরীর তরজমার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। ১৯ জানুয়ারি দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের ইজতেমা।
প্রথম পর্ব শেষ হবার পর দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমাকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই ময়দানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের ঢল এখন টঙ্গীমুখী। আজ ইজতেমা ময়দানে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের মাওলানা মোশারফ হোসেন জুমার জামাতের ইমামতি করার কথা রয়েছে। জু’মার নামাজে ইজতেমার মুসল্লীদের পাশাপাশি ঢাকা, গাজীপুর ও আশপাশের জেলার কয়েক লাখ মুসল্লী শরিক হতে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় দেশের বিভিন্ন জেলার অংশগ্রহণকারী মুসল্লীদের জন্য পুরো ময়দানকে ৮৭ খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। তবে জেলাওয়ারী মুসল্লীদের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে ৮৪টি খিত্তা। বাকি ৩টি খিত্তা রিজার্ভ রাখা হয়েছে। এছাড়া ময়দানের পশ্চিম-উত্তর পাশে বিদেশী মুসল্লীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বিদেশী নিবাস।
বুধবার থেকেই দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লীরা ইজতেমা ময়দানে নিজ নিজ এলাকার জন্য নির্ধারিত খিত্তায় খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। ইনফিরাদি ইবাদত বন্দেগি ও এজতেমায়ী আমলে মশগুল রয়েছেন। তারা ইজতেমার শীর্ষ মুরব্বিদের বয়ান গুনছেন। মুসল্লীদের আসা অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে মুসল্লী সমাগম কম লক্ষ করা গেছে।
বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী হাজী মো. এনির হোসেন জানান, দ্বিতীয় পর্বে শতাধিক দেশের প্রায় ১০-১২ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আয়োজক কমিটির মুরুব্বিরা আশা করছেন। ইতিমধ্যেই অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ৩ হাজার ১৯ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত বিদেশী খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কাশ্মীর থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসল্লী ইজতেমায় অংশ নিতে ময়দানে পৌছেছেন। তিনি আরো জানান, ভারতের নাগরিকত্ব বিলের কারণে ভিসা জটিলতায় অনেক চিলøাধারী ইজতেমার সাথি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছেন না।
এবারের ইজতেমায় দেশি বিদেশি ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরামগণ তাবলীগের দাওয়াতের প্রধান ৬ উসুল যথা : ঈমান, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমীন, তাসহীহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলিগ সম্পর্কে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক মূল্যবান বয়ান রাখবেন। বিদেশী মুরুব্বীগণ ভিন্ন ভাষায় মূল বয়ান করার সঙ্গে সঙ্গে তা আবার বাংলা ভাষায় তরজমা করা হবে।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে গত বুধবার থেকে মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভী মনোনীত দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাযের ৩২ সদস্য বিশিষ্ট জামাত ময়দানে অবস্থান করছেন। এ জামাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাযের শূরা সদস্য মাওলানা আব্দুস সাত্তার। জামাতের অপর সদস্যরা হলেন, মাওলানা শামীম আজমী, মাওলানা জামশেদ, মাওলানা মিয়াজী আজমত উল্লাহ, মাওলানা মুফতি শেহজাদ, মাওলানা রিয়াজুর রহমান, মাওলানা ইকবাল হাফিজ প্রমুখ।
এছাড়া দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশের তাবলীগের যে সমস্ত শীর্ষ মুরুব্বি ময়দানে এসেছেন তাঁরা হলেন, মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভীপন্থি বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, প্রকৌশলী খান মো: শাহাবুদ্দিন নাসিম, মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা মোশারফ হোসেন, অধ্যাপক ইউনুস শিকদার, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আবদুল্লাহ মনছুর প্রমুখ।
এ পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে আসার পথে ট্রেনের ধাক্কায় এক মুসল্লী নিহত এবং ইজতেমা ময়দানে এক মুসল্লীর মৃত্যু হয়েছে।
প্রথম পর্বের মতো এ পর্বেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ রয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রয়েছে কড়া নজরদারি। চেকপোষ্ট, মেটাল ডিটেক্টর, ওয়াচ টাওয়ার, সিসি টিভির মাধ্যমে পুলিশ ও র্যা বের কন্ট্রোল রুম থেকে তা সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খিত্তায় খিত্তায় অবস্থান নিয়ে পর্য়বেক্ষণ করছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেন জানান, দ্বিতীয় পর্বেও নিরাপদ পরিবেশে ইজতেমা আয়োজনে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, র্যা ব ও আনছার বাহিনী থাকবে। এ বারের ইজতেমায় সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য থাকবে। গতকাল থেকে প্রায় ৮ হাজার পুলিশসহ র্যা ব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া দিতীয় পর্বের ইজতেমাও সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
আগত মুসল্লীদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্যাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ময়দানের উত্তর পার্শ্বে নিউ মন্নু কটন মিলের অভ্যন্তরে মেডিক্যাল ক্যা¤প স্থাপন করে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৭ জানুয়ারী থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মুসল্লীদের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের দিন সকল ট্রেন টঙ্গী রেল জংশনে যাত্রাবিরতি দেবে।