গণবাণী ডট কম:
রাজধানীর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ভোটকেন্দ্রে যাবে নির্বাচনি মালামাল। ভোটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে আজ মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিরাপত্তার ও আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাহিনীকে সহায়তার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ৬৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তাঁদের মোতায়েন করা হয়। তাঁরা ভোটের আগে ও পরে মোট চারদিন দায়িত্ব পালন করবেন। এবারের নির্বাচনে সব বাহিনী মিলে মোট ৫০ হাজারের মতো আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচারণার ইতি টানতে হবে আজই। তাই শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে। ব্যাপক উত্সাহ, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে রাজধানী শহরে।
আজ ইভিএমে অনুশীলন ভোট :
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটাররা ভোটের আগের দিন নিজ কেন্দ্রে গিয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নিজের ভোট দেওয়া অনুশীলন করতে পারবেন। ইসির ইভিএম প্রকল্পের অপারেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান এ তথ্য জানান। ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সম্পূর্ণ ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে।
আজ ভোটকেন্দ্রে যাবে মালামাল :
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও আনুষঙ্গিক মালামাল রাজধানীর আটটি ভেন্যু থেকে আজ বিতরণ করা হবে। দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন ভেন্যু থেকেও আজ মালামাল বিতরণ করা হবে।
৬৭টি বিদেশি পর্যবেক্ষক :
ঢাকার দুই সিটির ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন ৬৭ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাতটি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিরা ঢাকা সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এর মধ্যে আমেরিকার ২৭ জন, ব্রিটিশ ১২ জন, সুইজারল্যান্ডের ৬ জন, জাপানের ৫ জন, নেদারল্যান্ডসের ৬ জন, ডেনমার্কের ২ জন, নরওয়ের ৪ জন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ৫ জন পর্যবেক্ষক সিটি ভোট পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এর বাইরে আরো ১৫ জনের আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
যান চলাচল বন্ধ :
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের দিন লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও আন্তঃজেলা লঞ্চ চলাচলে কোনো বাধা নেই। ইসির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এই আদেশ জারি করে। ইসি জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাস, বেবিট্যাক্সি বা অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, ট্রাক, টেম্পোসহ অন্যান্য যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত। তবে মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা :
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও মাঠে থাকবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুইটি ওয়ার্ডের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। এ নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি নিয়োগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র্যা ব। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে দুইজন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগ থাকবে। নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীদেরও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।