শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার বুক চিরে বহমান শীতলক্ষ্যার তীরে জেগে উঠা চরে স্ট্রবেরীর চাষে সফলতা এসেছে। শীতপ্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরীর প্রচলন থাকলেও প্রান্তিক কৃষকের কল্যাণে স্ট্রবেরী এখন এদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় স্থানীয় অন্যান্য কৃষকগণও স্ট্রবেরী চাষ আগ্রহী হয়ে ওঠছেন।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলাধীন সিংহশ্রী ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী একটি গ্রাম কুড়িয়াদী। এই গ্রামের গুটিকয়েক কৃষক নদীর তীরে জেগে উঠা চরে শীতকালীন ফসলের চাষ করলেও অধিকাংশ জমিই পতিত ছিল। কৃষিকাজে ভিন্নতা আনতে চলতি মৌসুমে পাশের শ্রীপুর উপজেলার ফুল চাষী দেলোয়ারের পরামর্শে কুড়িয়াদী গ্রামের কয়েকজন কৃষক স্ট্রবেরীর চাষ শুরু করেন। এদেরই একজন তোফায়েল আহমেদ বিদ্যুৎ। স্ট্রবেরী চাষ করে তিনি ইতিমধ্যেই সফলতা পেয়েছেন। পেয়েছেন সফল স্ট্রবেরী চাষী হিসাবে পরিচিতি।
তোফায়েল আহমেদ বিদ্যুৎ সাংবাদিকদের জানান, বর্ষাশেষে বিশেষত শীতকালে নদীর পানি নেমে যায়, তখন নদী তীরে জেগে ওঠা চরে জমে থাকা পলিমাটি থাকে খুব উর্বর হয়। যে ফসলের চাষ করা হয় তাতেই মেলে সফলতা। তিনি দেলোয়ারের মালিকানাধীন মৌমিতা ফ্লাওয়ারস থেকে ১ হাজার স্ট্রবেরীর চারা ক্রয় করেন, প্রতিটি চারার দাম ছিল ৩০টাকা করে। কয়েক মাস পরিচর্যা করার পর এখন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, প্রতি কেজি স্ট্রবেরী তিনি ৭’শ থেকে ৮’শত টাকা কেজি করে বিক্রি করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরী বিক্রি করেছেন।
তার পাশাপাশি নদীর চরে স্ট্রবেরীর চাষ করেছেন একই এলাকার আব্দুর রাজ্জাক প্রধান কাজি। তিনি রোপন করেছেন ৭হাজার স্ট্রবেরীর চারা। এছাড়াও হুমায়ুন কবির নামের এক যুবক রোপন করেছেন ১৩হাজার স্ট্রবেরীর চারা।
স্ট্রবেরী হল এক ধরনের ফ্র্যাগারিয়া (ইংরেজি: Fragaria) জাতীয় উদ্ভিদ এবং সারাবিশ্বে এটি ফল হিসেবে চাষ করা হয়। নয়ন জুড়ানো রঙ, গন্ধ, ও স্বাদে আকর্ষণীয় ফল স্ট্রবেরী। এ ফলের রস আইসক্রীম, জ্যাম, মিল্ক শেক এবং আরও অনেক খাদ্য তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শিল্পায়িত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরীর সুগন্ধ ব্যবহৃত হয়। ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্ট্রবেরীর চাষ করা হয়। এটি পরবর্তীতে চিলি, আর্জেন্টিনা এবং কালক্রমে অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে ও বেশি দিন থাকে সেসব এলাকায় বারি স্ট্রবেরী-১ নামে একটি উচ্চফলনশীল জাতের স্ট্রবেরী চাষ করা হচ্ছে। স্ট্রবেরীর পাকা ফল টকটকে লাল রঙের হয়। এ ফলটি সুগন্ধীযুক্ত, টক মিষ্টি স্বাদের। জমির পাশাপাশি টব, বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় এ ফল চাষ করা সম্ভব। একজন বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার জন্য নিজের জমিতে অথবা বর্গা নেওয়া জমিতে স্ট্রবেরী চাষ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। দেশের আরো কয়েকটি অঞ্চলের মতো এখন কাপাসিয়ার কয়েকজন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরীর চাষ শুরু করেছেন
স্ট্রবেরী চাষী হুমায়ুন কবিরের ভাষ্যমতে, অনেকেই অনেকভাবে টাকা পয়সা নষ্ট করে থাকেন। গত মৌসুমে পেপের বাগান করে শীলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, অনেক লোকশানের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাই এবার আমরা কয়েকজন মিলে একটি ঝুঁকি নিয়েছিলাম স্ট্রবেরী চাষের মাধ্যমে। নদীর তীরের পতিত চরে আমরা স্ট্রবেরী চাষে ভালো ফলন পেয়েছি। এখন আমাদের দেখাদেখি আগামী মৌসুমে অনেকেই স্ট্রবেরী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমাদের আশা লাভজনক চাষ বিধায় নদীর তীরে সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরী চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে আগামীতে।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মাহবুব আলম সাংবাদিকদের জানান, স্ট্রবেরীতে উচ্চমাত্রায় পুষ্টিমান বিদ্যমান। এই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগমুক্তিতেও সহায়তা করে। গাজীপুরে বিক্ষিপ্তভাবে স্ট্রবেরীর চাষ হলেও আমরা এর পরিমাণ নির্ধারন করতে পারিনি। অনেকে শখের বশে বাসাবাড়ীতে স্ট্রবেরীর চাষ করলেও এখন কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে জেগে উঠা চরে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরীর চাষ করছেন। এই চাষ লাভজনক বিধায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।